দুই মাস ধরে ফেরি সংকটে রয়েছে কাজিরহাট-অরিচা নৌরুট। এতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শত শত যানবাহন ঘাট পারের অপেক্ষায় থাকলেও ঘাট-পল্টুন স্বল্পতার কারণে ফেরি বাড়ানো যাচ্ছে না। মাত্র দুটি ছোট ফেরি দিয়ে চলছে পারাপার। ফলে দুই পাড়ে আটকা থাকছে চার শতাধিক ট্রাক।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) সকালে পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কয়েক মাস ধরে ঘাটে অচলাবস্থা থাকলেও পল্টুন স্বল্পতার কারণে ফেরি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

ফেরিঘাটে ঘাট-পল্টুন বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে অনেক বার জানিয়েছি। তারাই বিষয়টি বর্তমানে দেখভাল করছেন। পল্টুন ও ঘাট না বাড়ালে ফেরিঘাটের অচলাবস্থা কাটানো সম্ভব নয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফেরিঘাট এলাকায় আগত ট্রাকচালকদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধা না থাকায় কষ্ট ভোগ করছেন ঘাটে অবস্থানরতরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন ট্রাক, বাস, কার, মাইক্রোবাস চালকদের থাকতে হচ্ছে পারের অপেক্ষায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রাকশ্রমিক, নারী ও শিশুরা। ভাসমান দোকান থেকে অনিরাপদ খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে।

কাজিরহাট ফেরিঘাটের টার্মিনাল সুপারিনটেন্ডেন্ট আবুল কাইয়ুম বলেন, এ রুটের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের একটাই পথ-সেটি হলো ঘাট স্থপন করে বড় পল্টুন বসানো। এর বিকল্প নেই। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে ৪০০-৫০০ ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় থাকছে। যতদিন আরও ২-৩টি ফেরি এ রুটে যোগ না করা হবে ততদিন সমস্যা থেকেই যাবে। 

তিনি জানান, নদীপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ২৮ ডিসেম্বর রো-রো ফেরি শাহ মখদুমকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিসে পাঠানো হয়। ২৪ ডিসেম্বর কে-টাইপ ফেরি ফরিদপুরীকে মাওয়া-কাঁঠালবাড়িয়া রুটে পাঠানো হয়। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মূলত বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ফেরিঘাটে পল্টুন স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের এখানে পল্টুনের ব্যবস্থা থাকলেও ঘাট না দেওয়ায় ফেরি বাড়ানো যাচ্ছে না।

ট্রাকচালক মোমিনুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার জন্য যশোর থেকে ঘাটে এসে পাঁচ দিন অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে যশোর কালিশংকরপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়ে দুপুর ২টার দিকে কাজিরহাট ঘাটে পৌঁছান। তারপর থেকে পারের অপেক্ষায় আছেন। 

মাইক্রোবাসচালক মো. মহসিন মিয়া জানান, রোববার সকাল ৯টার দিকে তিনি কাজিরহাটে পৌঁছান। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি নদী পার হতে পারেননি।

পণ্যবাহী ট্রাকচালক আলমাস আলী জানান, বুধবার রাতে তিনি কাজিরহাট ঘাটে পৌঁছান। রোববার রাত পর্যন্ত ফেরির টিকিট কাটতে পারেননি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের কাজিরহাট অফিসের ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাঁচটি ফেরির মধ্যে তিনটি ফেরি চলাচলের বাইরে রয়েছে। গত ২ জানুয়ারি থেকে মেরামতের জন্য ফেরি কপোতি আরিচা ঘাটে নোঙর করা হয়েছে। এখন ক্যামিলীয়া ও কদম নামে দুটি ফেরি চলাচল করছে। তাও আবার মাঝে-মধ্যে একটি ফেরি অকেজো হয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন,‘দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা দূরীকরণে আরও পল্টুন স্থাপন করে নতুন বড় ফেরি বাড়ালে ঘাট আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক পল্টুন স্থাপন করে ফেরিঘাট সচল করার আহ্বান জানান তিনি।

রাকিব হাসনাত/এসপি