জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শিমুলতলী এলাকায় ছোট যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর দুই পাশের পিলারের মাটি ধসে পড়েছে। এতে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুর উত্তর পাশে নদীর পাড় ধসে পড়ছে। তারপরও নদীর পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলন থেমে নেই। চার মাস ধরে এভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চুপ।

পাঁচবিবি পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সুরুজ শ্যালো মেশিন দিয়ে নদীর বালু উত্তোলন করছেন বলে জানিয়েছেন বালু উত্তোলন কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরা। তবে সুরুজ বলেছেন, তার নামে বালু ইজারার কাগজপত্র রয়েছে। মূলত পাঁচবিবির পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বালু উত্তোলন করছেন। 

মেয়র হাবিবুর রহমান বালু উত্তোলন করার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতারা ১২ লাখ টাকায় বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন। তারা আমার ফাঁকা জায়গাটি ভরাটের কাজ করছেন। পুরো পাঁচবিবিতে এভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, শিমুলতলীতে সেতুর পাশ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে বালু তোলা হচ্ছে। নদী থেকে বালু তোলায় নদীর দুই পাড় ধসে পড়ছে। সেতুটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে শতাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। উল্টো যারা বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।

তারা আরও জানান, বালু উত্তোলনের কারণে গত বছর সেতুর উত্তর দিক ধসে পড়েছিল। তখন জেলা প্রশাসক (ডিসি), ইউএনও, পানি উন্নয়ন র্বোডর লোকজনরা এসেছিল। জিও ব্যাগ ফেলে নদীর পাড় ধসে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছিল। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবারও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

শনিবার দুপুরে শিমুলতলীতে দেখা গেছে, ছোট যমুনা নদীর শিমুলতলী ঘাটে নির্মিত সেতুর উত্তর দিকে নদীর পাড় ধসে পড়ছে। সেতু থেকে মাত্র দুইশ গজ দূরত্বে শ্যালো মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে নদীর পূর্ব পাশে ফেলা হচ্ছিল। সেখানে ট্রাক্টর এসে বালু নিয়ে যাচ্ছে।

উত্তোলনের দেখভালের কাজে নিয়োজিত থাকা অসিত কুমার ঘোষ বলেন, আমি বালু উত্তোলনের দেখভালের কাজ করছি। পাঁচবিবি পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সুরুজ বালু উত্তোলন করছেন। প্রতি ট্রাক্টর বালু এখান থেকে আটশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চার মাস ধরে এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আমিও জানি এভাবে বালু উত্তোলন করা অবৈধ। যদি স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করা যায় তাহলে অবৈধ কাজ বৈধ হয়ে যায়।

পাঁচবিবি পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সুরুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিমুলতলীতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেখানকার বালুমহালের কাগজপত্র আমার নামে আছে। শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তোলা নিষেধ আছে। পাঁচবিবিতে আরও অনেক জায়গায় নদী থেকে এভাবেই বালু তোলা হয়। আপনারা প্রতিবেদন করলে সব ঘাটেরই করেন।

পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান নদী থেকে বালু উত্তোলন করার কথা অস্বীকার করে বলেন, ছাত্রলীগের নেতারা ১২ লাখ টাকায় ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করছে। তারা আমার ফাঁকা জায়গাটি ভরাট করছে। পাঁচবিবিতে সব জায়গায় একইভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। 

পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরমান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাঁচবিবিতে পাঁচটি ঘাটের ইজারা দেওয়া আছে। শিমুলতলী ঘাটেরও ইজারা দেওয়া আছে। ইজারা নেওয়া থাকলেও নদী থেকে শ্যালো মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করা যাবে না। শিমুলতলীতে শ্যালো মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার আগে জানা ছিল না। শিগগিরই অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে।

চম্পক কুমার/এসপি