নাম যেমন বাহারি তেমনি খেতেও সুস্বাদু। এমনই লোভনীয় ও মজাদার পিঠা-পুলির পসরা বসেছে খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে। রোববার (০৯ জানুয়ারি) শুরু হওয়া এ মেলা চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। 

মেলার স্টলগুলোতে চিতই, মালপোয়া, দুধ পুলি, ভাপা, নকশি পিঠা, মুগ পাকন, পাটিসাপটা, লবঙ্গ লতিকা, হৃদয় হরণ, ডিম সুন্দরী, বিবি খানা, চালতা পাতা, জামাই পিঠা, গোলাপসহ বাহারি সব পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া স্টলগুলোতে রয়েছে বস্ত্র ও বিভিন্ন রকমারি পণ্য।

মেলায় ঘুরতে এসেছেন ইঞ্জিনিয়ার মো. রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেন, অত্যন্ত চমৎকার পরিবেশ এবং খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে এখানে পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে ভাজাসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেটা বাঙালির ঐতিহ্য। এই আয়োজন আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। গত দুদিনই আমি এসেছি। ধন্যবাদ জানাই খুলনা প্রেসক্লাবকে।

সংগঠক সুমা বড়াল বলেন, আমাদের এখানে সাতটি স্টল রয়েছে। সকলেই কেক ও পিঠার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখানে এক দিনের তৈরি প্রডাক্ট দ্বিতীয় দিন থাকে না। প্রতিদিনই নিত্য নতুন পণ্য তৈরি করা হচ্ছে।

পিঠার পসরা বসিয়েছেন মানসুরা তুলি। তিনি বলেন, পিঠা আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। প্রত্যেক বছর একবার পিঠা মেলা হওয়া উচিৎ। প্রথম দিনের চেয়ে আজ ক্রেতা ও দর্শনার্থী বেশ ভালো। বেচা-কেনাও ভালো হচ্ছে। এখানে দুধ পাকান, বধু পাকান, রস পাকান, বধুবরণ, চিকেন কুলি, হোমমেড মিষ্টি, ভাপা পিঠা, বালুসাই, গাজরের হালুয়াসহ ২০-২৫ রকমের পিঠা রয়েছে।

মেলায় ভিন্নতা দেখা মেলে ইয়াম্মি কেক ল্যান্ডের স্টলে। সেখানে প্রেশার কুকারে তৈরি করা হচ্ছে ভাপা পিঠা। প্রেশার কুকারে পানি গরম করে সেখান থেকে বের হওয়া বাষ্প ব্যবহার করে ভাপা পিঠা তৈরি করতে দেখা যায়। স্টলে ভাপা পিঠা তৈরি করছিলেন ফাহিমা আক্তার। তিনি বলেন, হাড়ি-পাতিলের পরিবর্তে প্রেশার কুকারে দ্রুত পিঠা তৈরি হয়। আর বাড়ি থেকে স্টলে হাড়ি-পাতিল না এনে সহজেই এই প্রক্রিয়ায় পিঠা তৈরি করা যায়। সবাই খেয়েও প্রসংশা করেছেন। 

তিনি বলেন, প্রেশার কুকারের বাষ্প বের হতে দেখে নিজে নিজেই ভাবলাম এই বাষ্প ব্যবহার করে ভাপা পিঠা তৈরি করা যায় কি না। দেখলাম খুব সহজে এবং দ্রুত পিঠা তৈরি করা যায়। আমার দেখা দেখি অনেকেই এই পদ্ধতিতে পিঠা প্রস্তুত করছেন। এতে সময় সাশ্রয় হয়। শুধু পিঠার মেলা নয়, এখানে পোশাকসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বসেছে বস্ত্র মেলাও। রয়েছে নানা ধরনের গহনার স্টল।

খুলনা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান মুন্না বলেন, বাঙালির ঐতিহ্য পিঠা ও বস্ত্র মেলার পাশাপাশি আজ সন্ধ্যা থেকে বন্ধুমহলের আয়োজনে করা হয়েছে। এখানে মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশন করছেন শিল্পীরা।

খুলনা প্রেসক্লাবের সহকারী সম্পাদক এএইচএম শামীমুজ্জামান বলেন, মানুষ যাতে শীতকালের পিঠার স্বাদ নিতে পারে সেজন্যই খুলনা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে পিঠা ও বস্ত্র মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় সব বয়সের মানুষ আসছে, কেনা-কাটা করছেন, ঘুরছেন, বিনোদন উপভোগ করছেন। শুধু পিঠা নয়, এখানে পোশাকসহ বিভিন্ন বস্ত্র স্টল রয়েছে। এই শুধু প্রেসক্লাব নয়, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই মেলার আয়োজন করা উচিত।

খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা বলেন, কয়েক বছর ধরে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। নগরবাসী তাদের যান্ত্রিক জীবনের বাইরে গিয়ে বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে।

খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু হাসান বলেন, প্রতি শীত মৌসুমে গ্রাম-বাংলায় পিঠা-পুলির আয়োজন করা হয়ে থাকে। পিঠা-পুলির উৎসবটা আমাদের সংস্কৃতির একেবারে শেকড়ের। খুলনা প্রেসক্লাব এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে নতুন প্রজন্মকে জানা ও উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে। অনেকেরই পিঠা-পুলির বিষয়ে আইডিয়া নেই। তাদের মধ্যে এই মেলা দেশের প্রতি ভালোবাসা, জাতীয়তাবোধ, বিনোদন, সাংস্কৃতিবোধ জাগ্রত করবে। এই আয়োজন বছরজুড়ে হওয়া উচিত।

মোহাম্মদ মিলন/এসপি