বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির (টিআর) প্রকল্পের কাজ না করিয়ে ৩৮ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ ২৩টি রাস্তার কাজ না করেই ৩৮ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান দায়সারা কথা বললেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলছেন, বরাদ্দের পুরো টাকাই লোপাট করেছেন সাবেক চেয়ারম্যান।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ নং ওয়ার্ডের চড়কগাছিয়া এলাকার ওয়ারেচ খন্দকার বাড়ি থেকে জয়নাল মুন্সি বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে ২ লাখ ৬৯ হাজার, চড়কগাছিয়ার আনছার মিয়ার বাড়ির কালভার্ট থেকে পূর্ব দিকে চান মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৯ হাজার, ৫ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বুড়িরচর কালভার্ট থেকে ফারুক খলিফার বাড়ি পর্যন্ত ২ লাখ ২০ হাজার, কামড়াবাদ তাহের মুসুল্লির বাড়ি থেকে রুস্তম ঘরামির বাড়ি পর্যন্ত ২ লাখ টাকা, পশ্চিম বুড়িরচর নয়াকাটা দুলালের বাড়ি থেকে আবু বক্করের বাড়ি পর্যন্ত ২ লাখ ৫০ হাজার, ১ নং ওয়ার্ডের ফরাজী পুল থেকে বীরেনের বাড়ি হয়ে বাবুলের বাড়ি পর্যন্ত ২ লাখ ও রায়ের তবক সামছুল হক গাজীর দোকান থেকে ছত্তার বিশ্বাস বাড়ি পর্যন্ত ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকাসহ একই ইউনিয়নে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে মোট ২৩টি প্রকল্পে ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার ৯৭২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

চড়কগাছিয়া গ্রামের ওয়ারেচ খন্দকার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, গত ১০ বছরে এই রাস্তার কোনো কাজ হয়নি। রাস্তার বেহাল দশার কারণে গাড়ি আসে না এখানে। আমরা শুনেছিলাম, গত বছর বরাদ্দ এসেছে এই রাস্তা মেরামতের। কিন্তু তৎকালীন চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান কোনো কাজ করায়নি।

একই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা নেছার, আবদুল হক, একাব্বর, ফারুক মৃধাসহ আরও কয়েকজন বলেন, তাদের এলাকায় বরাদ্দ পাওয়া এসব রাস্তার কোনো কাজ হয়নি। পুরো টাকা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লোপাট করেছেন।

৯ নং ওয়ার্ডের চড়কগাছিয়া এলাকার ওয়ারেচ খন্দকার বাড়ি থেকে জয়নাল মুন্সি বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার বরাদ্দ ২ লাখ ৬৯ হাজার, চড়কগাছিয়া আনছার বাড়ির কালভার্ট থেকে পূর্ব দিকে চান মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকার কাজ বাস্তবায়নের সভাপতি (সিপিসি) একই এলাকার কবির চৌধুরী। 

এ বিষয়ে কবির চৌধুরী বলেন, দুটি কাজের টাকা বরাদ্দ এসেছিল। পুরো টাকা সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান আমার থেকে নিয়ে গেছেন। তাই আমি কাজ করাতে পারিনি।

প্রকল্প ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দা জাফর হোসেন, দুলাল হাওলাদার, মোহাম্মাদ নাসিম, শাওন, নাজমুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১০-১৫ বছরে এসব রাস্তার কোনো কাজ হয়নি।

বুড়িরচর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এসব রাস্তা মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কারণ এসব রাস্তায় চলাচলে মানুষের চরম ভোগান্তি হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার পরে তিনি আমাকে জানান, এসব রাস্তার কাজ তো সাবেক চেয়ারম্যান করিয়েছেন। তিনি বরাদ্দ নিয়েছেন। নতুন করে এই রাস্তায় বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। আমি তালিকা চাইলে তিনি আমাকে বরাদ্দের তালিকা দিয়ে দেন। আমি হতবাক হয়েছি। ২৩টি প্রকল্পের একটির কাজও হয়নি। সব টাকা লুট হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কাজের সভাপতি (সিপিসি) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তারাই এ বিষয়ে ভালো জানবে। আমি কোনো টাকা লুট করিনি। আমি কাজ না করলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কেন বরাদ্দ দিয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন বলেন, এসব প্রকল্প আমি পরিদর্শন করে দেখেছি। কোনো কাজই হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি তৎকালীন চেয়ারম্যানকে একাধিকবার বলেছি। কিন্তু তিনি কোনো কাজ করায়নি।

বরগুনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্প পরিদর্শন করব। কাজ না হলে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বরাদ্দের টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য আইনের দ্বারস্থ হতে হবে। 

এসপি