মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা সংগ্রহ করেন ওয়াসিম আকরাম (৪০)। পেশায় ব্যবসায়ী এবং নিজ এলাকায় তার মালিকানাধীন একটি মার্কেট রয়েছে। সেই মার্কেট বিক্রি করে ধারের টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেন পাওনাদারদের।

কিন্তু গোপনে মার্কেট বিক্রি করে এলাকাবাসীর ধারের টাকা পরিশোধ না করেই লাপাত্তা হয়ে যান মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের সদ্য পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নাসির উদ্দিনের ছেলে ওয়াসিম আকরাম (৪০)। এতে বিপাকে পড়ে আইনের আশ্রয় নেন এলাকায় ভুক্তভোগী ডজন খানেক নারী-পুরুষ।

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা এলাকার ওয়াসিমের বাড়িতে গেলে তার কোনো সন্ধান দিতে পারেননি পরিবারের লোকজন।

বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের সুলন্ডী গ্রামের পাওনাদার কাজলী বেগম বলেন, মুদি দোকানে ব্যবসার কথা বলে ওয়াসিম তিন কিস্তিতে আমার কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা ধার নেন। কয়েকবার দিন-তারিখ দিয়েও আমার পাওনা টাকা দেয়নি ওয়াসিম।

একই ইউনিয়নের আইরমাড়া গ্রামের পাওনাদার সূর্য মিয়ার স্ত্রী লিপি বেগম বলেন, স্ট্যাম্পে চুক্তি করে কিছু মুনাফার আশ্বাস দিয়ে আমার কাছ থেকে চার লাখ টাকা ধার নেন ওয়াসিম। নির্বাচনের পর মার্কেট বিক্রি করে হলেও টাকা পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দেন। এখন ওই মার্কেট গোপনে বিক্রি করে পালিয়েছে সে।

একই এলাকার আব্দুল বেপারীর ছেলে আশিকুর রহমান বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের ছেলে ওয়াসিম এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ধার নেয়। তবে বিষয়টি কেউ জানত না। স্ট্যাম্প ও চেক দিয়ে সে টাকাগুলো গোপনে ধার নেয়। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে সে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেট বিক্রি করে লাপাত্তা হয়ে যায়।

সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের চৈল্লা গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর মৌজায় দোকানসহ একটি মার্কেট সাড়ে ১৮ লাখ টাকায় ওয়াসিমের কাছে বিক্রি করি। তবে সে (ওয়াসিম) আমাকে নগদ সাড়ে ৮ লাখ টাকা দেয় এবং বাকি টাকার জন্য চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের অনুরোধ জানায়। পরে ব্যাংকে গেলে ওয়াসিমের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই বলে জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয় নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের সদ্য পরাজিত চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, তার ছেলে ওয়াসিম একজন মাদকাসক্ত। ব্যবসার কথা বলে এলাকার নিরীহ মানুষের কাছে থেকে টাকা ধার নেওয়ার বিষয়টি তিনি সম্প্রতি জানতে পেরেছেন।

তিনি আরও বলেন, একই বাড়িতে অবস্থান করলেও তার ছেলের সঙ্গে পৃথক সংসার তার। সম্প্রতি তার ছেলে ওয়াসিম বিদেশে গেছে বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন। ছেলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও নেই বলে দাবি করেন। তবে এলাকার সাধারণ মানুষের টাকা উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণ করেন তিনি।
 
ওয়াসিমের স্ত্রী লাভলী বেগম বলেন, তার স্বামী ওয়াসিম কোথায় গেছেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আব্দুর রউফ বলেন, এলাকাবাসীর টাকা নিয়ে কেউ লাপাত্তা হওয়ার বিষয়ে তারা জানা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সোহেল হোসেন/এনএ