পৌষ সংক্রান্তি উৎসব উপলক্ষে হাওরবেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে বসেছে মাছের মেলা। এসব মেলায় বিশাল আকৃতির মাছ উঠেছে। উৎসাহ নিয়ে ভোক্তারাও মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার (১২ জানুয়ারি) থেকে এ মেলা শুরু হয়েছে। কোনো বাজারে একদিন আবার কোথাও কোথাও তিন দিন ধরে চলবে মাছের মেলা। 

শ্রীমঙ্গলের পৌর নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ৫৫ কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছ মেলায় এনেছেন মফিজ মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী। দাম হাঁকছেন এক লাখ টাকা। মাছটি দেখার জন্য অনেকেই ভিড় করছেন। 

মফিজ মিয়া জানান, ৪৫ হাজার টাকা দাম উঠেছে, সন্তোষজনক দাম পেলে তিনি মাছটি বিক্রি করবেন। 

১৯ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছেন আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল মালিক। তিনি বোয়ালটির দাম ৪৫ হাজার টাকা চেয়েছেন। তবে দাম উঠেছে ১৮ হাজার টাকা।

আব্দুল মালিক বলেন, আসল মেলা বসবে শুক্রবার। এদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর মাছ উঠবে এবং প্রতিবারের মতো এবারও ভালো বেচাকেনা হবে বলে আশা করছি। প্রথম দিনে মেলায় প্রচুর মাছের আমদানি হলেও ক্রেতার চেয়ে দর্শকের সংখ্যাই বেশি। 

মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজারে ও সদর উপজেলার শেরপুরে মাছের মেলা বসেছে। কমলগঞ্জ মুন্সীবাজার, ভানুগাছ বাজার, শমশেরনগর, আদমপুর ও শহীদনগর বাজারেও মাছ উঠেছে। প্রতিটি মাছের দোকানে বড় আকারের মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। 

মেলায় বোয়াল, বাগাড়, চিতল, রুই, কাতলাসহ সব ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। ৫ কেজি থেকে শুরু করে ২৫-৩০ কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে মেলায়। সহজে হাট-বাজারে পাওয়া যায় না- এমন মাছও সাজিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। 

শমশেরনগর বাজারের মাছ বিক্রেতা মুকুল মিয়া জানান, তিনি ২৭ কেজি ওজনের বাগাড় মাছ নিয়ে বসেছেন। 

ভানুগাছ বাজারের মাছ বিক্রেতা আরমান মিয়া এবারের মেলায় ১৬ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ ও ২০ কেজি ওজনের বাউশ (কাতল) মাছ নিয়ে বসেছেন। তিনি বোয়াল মাছটির দাম হাঁকছেন ১৫ হাজার টাকা। ক্রেতারা ওই মাছ ১০ হাজার টাকা বললেও তিনি মাছটি বিক্রি করেননি। কাতল মাছের দাম হাঁকছেন ১০ হাজার টাকা। 

মাছ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, ২২ কেজি ওজনের কাতল মাছের দাম ৪৫ হাজার টাকা হাঁকছেন। মাছটি ২৫ হাজার টাকা বলার পরও তিনি বিক্রি করেননি। 

ক্রেতারা জানান, মেলায় নানা জাতের বড় আকারের মাছ উঠলেও দাম বেশ চড়া। বিক্রেতাদের সঙ্গে দরাদরি করে মাছ কিনে নিতে হয়। 

মাছ বিক্রেতারা বলেন, দাম বড় কথা নয়। মূলত ক্রেতাদের আকর্ষণ করে মেলায় বড় আকারের মাছ সরবরাহ করা হয়। বেশ চড়া দাম বলা হলেও ক্রেতারা দরাদরি করে পরে সহনীয় পর্যায়ে হলে কিনে নিচ্ছেন। 

করোনাভাইরাসের নতুন ধরণ ওমিক্রনের কারণে কুশিয়ারা নদীর তীরে শতাধিক বছরের পুরোনো সদর উপজেলার শেরপুরের মাছের মেলা এবার হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা শেরপুর লঞ্চঘাটের মৎস্য আড়তেই এবার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছেন বিক্রির জন্য। আড়তে বোয়াল, আইড়, পাবদা, টেংরা, কই, মাগুর, রুই, কাতলা, বাউশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠেছে। মৎস্য আড়তের এই মেলায় দর্শনার্থীরা ভিড় করেছেন। এই মেলা আরও একদিন থাকবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

ওমর ফারুক নাঈম/আরএআর