‘আগোত (পূর্বে) হামার বাপ-দাদারা থাকছে। এ্যলা (এখন) হামরা আছি। এলের জাগাত (রেলওয়ের জমি) যুগ যুগ ধরি আছি। হামার তো নিজের জায়গা-জমি নাই। এই জনতে বস্তিত সোগ ভূমিহীন মানুষেরা হামরা একসাথে থাকি। সরকারের কাছে দাবি, হামাক উচ্ছেদ করেন না। দয়া করেন, না হইলে হামাক পতোত বইসা (পথে বসা) নাগবে।’ 

কোনো রকম পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদের অপতৎপরতা বন্ধের দাবিতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শহীদুল ইসলাম। ষাটোর্ধ্ব শহিদুল রংপুর নগরের সাতমাথা রেলওয়ে বস্তিতে বসবাস করেন। পেশায় তিনি একজন ফেরিওয়ালা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেন শহীদুল ইসলাম। তার মতো বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভূমিহীন এসব মানুষ সাতমাথা রেলওয়ে বস্তিতে বাস করেন।

বস্তিবাসী আব্দুল মতিন মিয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ, বস্তিবাসী বেলাল হোসেন, সোহেল মিয়া, শেফালী বেগম, চায়না বেগম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এই ভূমিহীন, অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারগুলো রেলওয়ে-সংলগ্ন বস্তিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের নিজস্ব কোনো ভিটেমাটি নাই। তারা দিন আনে দিন খায়। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা হলে তাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

বস্তিবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে দাবি জানানো হলেও পুনর্বাসন করা হয়নি। অথচ শত শত একর খাসজমি ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাবহির্ভূত রাজনৈতিক প্রভাবশালী ভূমিদস‍্যুদের দখলে।

তারা বলেন, এসব খাসজমিতে ভূমিহীন, অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের থাকার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। এ সময় পুনর্বাসন ছাড়া সাতমাথা রেলওয়ে বস্তির কাউকে উচ্ছেদ না করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ