করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনে যাতে আক্রান্ত হতে না হয়, এ জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য করোনা টিকার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার শর্তের বিষয়টি কিছুটা শিথিল করায় শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে ভিড় করছে কেন্দ্রগুলোয়।

কিন্তু টিকা নিতে এসে ইভ টিজিংয়ের শিকার হচ্ছে মেয়ে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিতে আসা একাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ করে। কয়েকজন টিকা না নিয়ে বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

সরেজমিনে টিকা কেন্দ্রে দেখা যায়, চলতি মাসের মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা টিকা না নেওয়া পর্যন্ত স্কুল-কলেজে তারা ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সরকারের এমন ঘোষণার পর থেকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জন্মনিবন্ধনের সনদ দেখিয়ে টিকা নিচ্ছে। টিকা কেন্দ্রে ছেলেদের জন্য আলাদা বুথ এবং মেয়েদের জন্য আলাদা বুথ রয়েছে।

এরপর মেয়েদের বুথের সামনে মেয়ের লাইনের আশপাশে হাসপাতালের তিনটি প্রবেশপথের দুটিতে ছেলে শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মেয়েদের নানা কটূক্তি, শিশ দেওয়া ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে নানা প্রস্তাব দিচ্ছে। এতে অনেকে বিরক্ত হয়ে টিকা না নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ১০টার সময় এসেছি টিকা নিতে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। খারাপ লাগছে। এরপর আবার ছেলেরা বাজে বাজে কথা বলছে। তাই টিকা না নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি।

কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, আমরা বান্ধবীরা টিকা নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ। ছেলেরা আমাদের সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে। বিষয়টি খুবই বিরক্তিকর।

বেগম নুরনাহার স্কুলের সপ্তম শ্রেণির আরও এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি টিকা নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়েছি। হাসপাতালের গেটের সামনে ছেলেরা আমাকে ঘিরে ধরে গার্লফ্রেন্ড হবে জিজ্ঞেস করছে।

বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন ছেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা কার্ড দেখিয়ে বলে, আমাদের টিকা নেওয়া শেষ। বান্ধবীদের সঙ্গে একসঙ্গে বাড়ি যাব।

হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ারুল করীম বলেন, আমরা হাসপাতালের পুলিশ বক্সের দায়িত্বে রয়েছি। টিকা কেন্দ্রে আমাদের দায়িত্ব নেই। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পুলক কুমার বলেন, আমরা টিকার বিষয়টি দেখছি না। এটা জেলা সিভিল সার্জন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেখে।

জেলার নবনিযুক্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. মনজুর এ-মুর্শেদ বলেন, গতকাল আমি জয়েন করেছি। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। যাতে আগামীকাল থেকে এমনটা না ঘটে।

মো. জুয়েল রানা/এনএ