চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের কৃষক ইয়াসিন আলী। গত বছর তিন বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছিলেন। সব খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হয়েছিল ১৮ লাখ টাকা। এবার তিনি ছয় বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় গাছের যত্নও নিয়েছিলেন ভালোমতো। থোকায় থোকায় এসেছিল ফল ও ফুল। সব মিলিয়ে ফলনও হয়েছিল বাম্পার।

কিন্তু বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হওয়া শিলাবৃষ্টিতে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে ইয়াসিন আলীর। স্ট্রবেরির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে। শুধু ইয়াসিন আলী নয়, সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের টিকরীর মাঠে এমনই কোটি টাকা লাভের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে আরও পাঁচ কৃষকের।

ওই পাঁচ কৃষকের মধ্যে মোহাম্মদ আলীর তিন বিঘা, আব্দুল মোমেনের তিন বিঘা, আবু বক্করের দেড় বিঘা, আব্দুল জলিলের দুই বিঘা, আব্দুস সালামের এক বিঘা এবং শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের আনারুলের তিন বিঘা জমির স্ট্রবেরি নষ্ট হয়ে গেছে। তারা সবাই অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করেছিলেন। পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করেছিলেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে পুনরায় চাষাবাদ করতে সরকারকে এগিয়ে আসার দাবি জানান তারা।

প্রথমবারের মতো তিন বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছিলেন আনারুল ইসলাম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, এক রাতের আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে বাঁচার আর কোনো সুযোগ নেই। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ফুল, ফলসহ গাছ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। গাছে ফুল, ফল দেখে মন ভরে যাচ্ছিল। ভাবছিলাম ১০ দিন পরেই গাছ থেকে স্ট্রবেরি সংগ্রহ করব। কিন্তু তা আর হলো না। 

কৃষক আব্দুল মোমেন জানান, জমিগুলো ইজারা নেওয়ার পর ঋণ নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করেছিলাম। তিন বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করতে খরচ হয়েছিল ৬ লাখ টাকা। আশা করেছিলাম, সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকবে অন্তত ২০ লাখ টাকা। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ। 

কথা ছিল ইয়াসিন আলী জমি থেকে বৃহস্পতিবার প্রথম স্ট্রবেরি তুলবেন। তিনি জানান, বুধবার বিকেলেও খুশি মনে জমি থেকে বাড়ি ফিরে গেছি। কারণ এ বছর স্ট্রবেরি চাষের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছিল। কিন্তু সবকিছু মাটিতে মিশে গেল। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাসনুভা ইয়াসমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের সহয়তায় বাম্পার ফলন হওয়ায় গতকাল স্ট্রবেরির মাঠ পরিদর্শন করেছিলাম। অথচ তার পরের দিন নষ্ট হওয়া জমি দেখতে আসতে হয়েছে। রাতের শিলাবৃষ্টিতেই সব শেষ হয়ে গেছে। কৃষকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিলাবৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই উপজেলায় ফিলি জমির ক্ষতি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানিহাটি, মহারাজপুর ও বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা, ছত্রাজিতপুর ও ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শিলাবৃষ্টিতে দুই উপজেলার ৮১২ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। গম, সরিষা, ডালজাতীয় বিভিন্ন ফসল, সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, বরই ও বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। আগামী কয়েকদিন রোদ উঠলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমবে বলে জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি