শীতের আগমনে বাঙালি বাহারি পিঠার স্বাদ ও গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। আর এ পিঠা বানাতে ব্যবহার করা হয় আখ কিংবা খেজুর গুড়। শীতে ভোক্তাদের টার্গেট করে সাভারের নামাবাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ভেজাল গুড়ের কারখানা। চিটাগুড়, চর্বি, রঙ ও আঠা মিশিয়ে এসব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে আখ ও খেজুর গুড়। 

সাভারের এমন একটি কারখানার নাম রুপা এন্টারপ্রাইজ। যেখানে দিনের আলোয় উৎপাদন না হলেও রাতে ধুম পড়ে ভেজাল গুড় উৎপাদনের। রাতের মধ্যেই টন টন ভেজাল গুড় উৎপাদন করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বাজারে। আর এমন গুড় কিনে নিজের অজান্তেই বিষ খাচ্ছেন ভোক্তারা। তবে জেনে বুঝে এমন গুড় বিক্রি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাভারের ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ভেজাল জেনে গুড় বিক্রি করেন না তারা। 

বুধবার (১২ জানুয়ারি) রাতে সাভার নামাবাজার এলাকায় রুপা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি গুড় তৈরির কারখানায় দেখা যায়, সারি সারি সাজানো আটার বস্তা। রয়েছে চিটাগুড়, কাপড়ের বিষাক্ত রঙ, গরুর চর্বি আর কাগজে লাগানো এক ধরনের আঠা। এসবের সংমিশ্রণে তারা নির্দ্বিধায় তৈরি করছেন গুড়। এসব মানুষের না পশুখাদ্য দেখে বোঝার উপায় নেই। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, রুপা এন্টারপ্রাইজের মালিক গৌতম সাহা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কতিপয় ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে ভেজাল গুড় উৎপাদন করছেন। দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এমন খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে এমন প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল। তবে ২০১৭ সালে র‌্যাব অভিযান চালায় এই কারখানায়। সে সময় ২ লাখ টাকা জরিমানা করে কারখানার সমস্ত কাঁচামাল ও উৎপাদিত গুড় ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। সাভার উপজেলা রাজস্ব সার্কেলও (ভূমি) অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই ভেজাল গুড় উৎপাদন। 

সাভার নামাবাজারের গুড় ব্যবসায়ী মৃদুল সাহা বলেন, ময়দা, চিনি, চিটাগুড় ও চর্বির সংমিশ্রণে নামাবাজারে গৌতম বাবু গুড় বানান বলে আমরা জানি। কিন্তু কোনো দিন দেখিনি। ভেজাল গুড় সাভারে উৎপাদন হওয়ায় আমরা সাভারের কোনো গুড়ই বিক্রি করি না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা নির্ভেজাল গুড় সংগ্রহ করে বিক্রি করি।

ব্যবসায়ী দুলাল দাস ৩২ বছর ধরে সাভারে গুড় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, সাভারে গৌতমের গুড় চলে না। গৌতম বাইরে ওসব গুড় বিক্রি করেন। আমরাও জেনেশুনে এমন গুড় বিক্রি করি না। তবে তার দাবি চিনি ছাড়া কোো গুড়ই উৎপাদন হয় না। তবে আমাদের গুড় আখের রস দিয়েই তৈরি করা হয়।

রুপা এন্টারপ্রাইজের মালিক গৌতম সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মূলত কারখানায় গোখাদ্য উৎপাদন করি। আমরা গুড় উৎপাদন করি না। এসব মিথ্যা কথা। গুড় উৎপাদনের ভিডিও সংরক্ষণে আছে এমন কথার জবাব না দিয়ে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, এ ধরনের খাদ্য মানবদেহে প্রবেশের ফলে ক্যানসারের মতো রোগের সৃষ্টি করতে পারে। মানুষের বিভিন্ন অরগান ড্যামেজ হতে পারে। শিশুদের জন্য তো এমন খাদ্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব খাদ্য থেকে অব্যশ্যই বিরত থাকতে হবে। 

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ২৩ ধারায় বিষাক্ত দ্রব্যের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন, একই আইনের ২৫ ধারায় ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং ৩৩ ধারায় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় খাদ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ব্যতিক্রম হলে দণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪২ ও ৪৩ ধারায় বিষাক্ত দ্রব্য ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন কিংবা মানবদেহের ক্ষতিকর এমন কোনো খাদ্য উৎপাদন করলে দুই বছরের কারাদণ্ড কিংবা দুই হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আমরা এই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখব। প্রমাণ পেলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হবে।

মাহিদুল মাহিদ/এসপি