আধিপত্য বিস্তার, কমিটি ও মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ নেতা নয়নকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার পরিবার। 

নয়নকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আটকে রেখে মারধরের সময় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পায়ে ধরে আকুতি-মিনতি করেছিলেন মা মনোয়ারা বেগম ও বড় ভাই মানিক। কিন্তু মা-ভাইয়ের এমন করুণ আকুতি উপস্থিত নেতাদের মন গলাতে পারেনি। কথাগুলো বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা।

শুক্রবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামে নয়নের বাড়িতে গিয়ে শোকার্ত পরিবারের আর্তনাদ আর বিলাপে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছিল। নয়নের এমন করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না কেউই। আর এ হত্যাকাণ্ডকে পূর্ব পরিকল্পিত বলে বলছেন তার বড় ভাই মানিক মিয়া। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও ১০-১৫ জন জড়িত বলে জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের কাওরাইদ বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী কার্যালয়ে ডেকে এনে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী মো. নয়ন মিয়াকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। 

নিহত নয়ন শেখ (২৮) উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আব্দুল কাদিরের ছেলে। তিনি কাওরাইদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিল। অভিযুক্ত খাইরুল ইসলাম মীর (৩৫) উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের কাওরাইদ গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে। খাইরুলও কাওরাইদ ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিল।

নয়নের বড় ভাই মানিক জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কাওরাইদ কেএন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা খাইরুলের ছেলে অনুভবের (১৪) সঙ্গে নয়নের অনুসারীদের ঝগড়া হয়। পরে তার অনুসারীরা ঝগড়ায় বিষয়টি তাকে জানায়। নয়ন উভয় পক্ষকে ডেকে অনুভবকে একটা থাপ্পড় দিয়ে মীমাংসা করে দেয়। থাপ্পড় দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে যুবলীগ নেতা খাইরুল মীর নয়নকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে ডেকে পাঠান। সেখানে আগে থেকেই খাইরুল মীরের নেতৃত্বে ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নয়নকে আটকে রাখার খবর পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এসে নয়নকে না পেয়ে খুঁজতে থাকেন। কিছু সময় পর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পেছনে পুকুর থেকে নয়নের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও জানান, নয়ন মাদকবিরোধী বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা করত। চার মাস আগে নয়নের সঙ্গে খাইরুলের অনুসারী মাদক ব্যবসায়ী বাচ্চুর মারামারির ঘটনা ঘটে। নানা বিষয়ে নয়নের সঙ্গে বিরোধ চলছিল খাইরুল অনুসারীদের। হত্যা করতে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা করেছিল বলে নয়ন জানিয়েছিল। ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছিল নয়ন। 

অন্যদিকে খাইরুল মীরও বলয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে অন্য একজনকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। নয়ন তাদের প্রার্থীর তুলনায় বেশ জনপ্রিয় ছিল, তবে ওই প্রার্থীর নাম জানাতে পারেননি তিনি। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার তারা নয়নকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের পূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

অভিযুক্ত খাইরুল মীর ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছে। তার বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঘরগুলোও ছিল তালাবদ্ধ।

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন বলেন, নয়ন ছাত্রলীগের ত্যাগী একজন নেতা ছিল। পরিশ্রমী ও নিবেদিত প্রাণ ছিল ছাত্রলীগের জন্য। তার অকাল মৃত্যুতে ছাত্রলীগ গভীরভাবে শোকাহত। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের কঠিন শাস্তির দাবি জানান।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, হত্যাকেণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় ভাই তারা শেখ বাদী হয়ে ৩০-৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শিহাব খান/এসপি