আবু বেপারী (৬০) ও ফয়েজা বেগম (৫০) দম্পতির বসবাস শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ১০ বছর আগে ডামুড্যা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে টং দোকান করে শুরু করেন পিঠা বিক্রি। এরপর আর তাদের থেমে থাকতে হয়নি। বেড়েছে তাদের পিঠার কদর। পিঠাপ্রেমীদের সিরিয়াল দিয়ে কিনতে হয় পিঠা।  

স্থানীয়রা জানান, আবু বেপারী দম্পতি দীর্ঘ দিন ধরে পিঠা বিক্রি করছে। তাদের পিঠার অনেক কদর রয়েছে। তারা ভাপা ও চিতই পিঠা বানান। দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে আসেন পিঠা কিনতে। অনেক সময় ভিড় বেশি থাকলে দিতে হয় সিরিয়াল।

বড় একটি পাত্রে ভাপা পিঠার জন্য ৭-৮ কেজি চাল গুড়া করা রয়েছে। পাশে আরেকটি পাত্রে চিতই পিঠার জন্য পানি মিশ্রিত চাল রাখা। চাল, নারিকেল ও খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভাপা পিঠা। চিতই পিঠা খাওয়ার জন্য ৮-১০ পদের ভর্তা রেখেছেন। তবে বেশি পিঠা নিতে হলে এক দিন বা দুই দিন আগে অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়। শেষ বিকেল থেকেই পিঠার স্বাদ নিতে দোকানের সামনে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

পিঠা বিক্রেতা আবু বেপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শীতের দিনে পিঠা ও অন্য সময় ছোলা বুট ও পিঁয়াজু বিক্রি করি। এ দিয়েই আমাদের সংসার চলে। ১৫ বছর ধরে এই জায়গায় আছি। তবে ১০ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করি। পিঠা তৈরির উপকরণ বাড়ি থেকে তৈরি করে আনি। সারাদিন আমার স্ত্রী ও আরেকজন মহিলা পিঠা বানানোর চাল গুড় করে। আমি নারিকেলের ছোবড়া ফেলা, কুড়ানো ও খেজুর গুড় আনার কাজ করি। চেষ্টা করি পিঠাপ্রেমীদের চাহিদা অনুযায়ী গরম গরম পিঠা খাওয়ানোর। 

ফয়েজা বেগম বলেন, এখন সব জিনিসের দাম তুলনামূলক বেশি। খরচ করে সেই দামে পোষায় না। অন্য কাজও পারি না। এই কাজ শিখেছি। এখন এই কাজ করি। বাঁচতে তো হবে। এখানে যা রোজগার করি তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে যায়।

শিধলকুড়া থেকে পিঠা খেতে এসেছেন আক্তার হালিম। তিনি বলেন, শীতের সময় পিঠা খেতে ভালো লাগে। ডামুড্যা বাজারে আর কোথাও পিঠা বিক্রি হয় না। এই একটি জায়গায় পিঠা বিক্রি হয়। আর তাদের পিঠার মান ভালো। খেতেও সুস্বাদু। তাই প্রতি বছর এখানে আসি পিঠা খাওয়ার জন্য। খুব ভালো লাগে।

আহসান হাকিম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, এই দোকানে স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে পিঠা বানান। তাদের তৈরি মিষ্টি ও ঝাল পিঠা দুটোই ভালো লাগে। 

ডামুড্যা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নান্নু মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে সব ধরনের মানুষ পিঠা খেতে আসে। অনেকেই বাড়ির ছেলে-মেয়েদের জন্য পিঠা কিনে নিয়ে যায়। ব্যস্ততার কারণে বাড়িতে পিঠা খাওয়ার সময় হয়ে উঠে না। তাই এখানে সেই স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করছি। স্বামী-স্ত্রীর এই পিঠার দোকান খুব জনপ্রিয়। স্বাদ ও ভালো লাগা থেকে দূরের মানুষ ছুটে আসে পিঠা খেতে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি