এয়ার কন্ডিশনার (এসি) কেনার টাকা পরিশোধ করতে করোনার টিকা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর উচ্চবিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। জেলার দুর্গম ঢালারচর ইউনিয়নের বিদ্যালয়টির এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এদিকে সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের করোনা টিকা প্রদানে ফি আদায়ের কোনো আইনগত সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বেড়া উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

দেশব্যাপী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর করোনা টিকা প্রদান করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে ঢালারচর উচ্চবিদ্যালয়ে করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টিকার ফি বাবদ নেওয়া হয়েছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা করে।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড়া টিকা প্রদান করেনি বলে জানায় একাধিক শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমানের ভাই সোহেল রানা বলেন, করোনার টিকা সংরক্ষণে এসি কেনার জন্য সরকারিভাবে টাকা দেওয়া হয়নি, তাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসি বাবদ ফি আদায় করেছে। আমার ভাইও সকালে ১০০ টাকা জমা দিয়ে করোনার টিকা নিয়ে আসছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, সকালে স্কুলে এসে টিকার জন্য লাইনে দাঁড়ানো হলে টাকার কথা বলা হয় বুথ থেকে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হলে করোনার টিকা দেওয়া হবে না বলে জানায়। আমি তখন ফের বাড়িতে গিয়ে বাবার থেকে টাকা এনে করোনার টিকা কেন্দ্রের টেবিলে জমা দিয়ে টিকা নিয়েছি।

সে আরও জানায়, বিনামূল্যের টিকা দিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৬০ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। আমরা কয়েকজন বিষয়টির প্রতিবাদ করলে স্যাররা ভয়ভীতিও দেখান। পরে বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে টিকা গ্রহন করি।

এ বিষয়ে ঢালারচর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী আছে। প্রত্যেকের কাশিনাথপুর বেড়া উপজেলা সদরে গিয়ে টিকা নিতে হলে কমপক্ষে ৩০০ টাকা করে খরচ হবে এবং যাতায়াতেও ঝুঁকি রয়েছে। তাই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও অবহিত করা হয়েছে। রোববার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীকে টিকা প্রদান সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, টিকা কার্যক্রম পরিচালনায় এসি কেনা বাবদ ১ লাখ ১২ হাজার টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা দিয়ে পরিশোধ করা হবে।

বেড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খবির উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকা আদায়ের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলার আরও পাঁচটি বিদ্যালয়ে এভাবেই এসি কেনা হয়েছে। তবে এটি টিকা ফি নয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা অধিদফতরের এ বিষয়ে অনুমোদন আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জান্নাত বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ টিকা প্রদানে কোনো প্রকার টাকা নিচ্ছে না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন টাকা নিচ্ছে, বিষয়টি আমার জানা নেই।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ ফ্রি দিচ্ছি। প্রতিটি বিদ্যালয়ে গিয়ে ভ্যাকসিন দিয়ে আসা হচ্ছে এবং পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। বাদবাকি কাজ বিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। করোনার টিকা দিতে টাকা আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। এ বিষয় কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে জেলা উপজেলা ভ্যাকসিন কমিটি আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, এমন বিষয়ে কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাকিব হাসনাত/এনএ