বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোস্ট হারভেস্ট বিভাগ টমেটো সংরক্ষণের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এখন যে কেউ স্বল্প খরচে ও টমেটোর সঠিক গুণাগুণ অক্ষুণ্ন রেখে বাড়িতেই খুব সহজে চাহিদা অনুযায়ী টমেটো সংরক্ষণ করতে পারবেন। আর এ থেকেই বছরজুড়েই মিলবে টমেটোর স্বাদ।

বর্তমানে ফুটস ভেজিটেবল হিসেবে সবার নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় টমেটো প্রথম পছন্দের। ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অনন্য উৎস এ টমেটো। তবে মৌসুম ভেদে চাষ হওয়ায় সারাবছর এর স্বাদ ও গুণগুণ ধরে রাখা ছিল কঠিনতর। কোল্ড স্টোরেজে অধিক ব্যয়ে সংরক্ষণ করায় অধিক টাকায় এ টমেটো কিনে খেতে হতো। মৌসুম বাদে এর দাম চলে যায় সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোস্ট হারভেস্ট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় দুই মৌসুমে টমেটো চাষ হলেও সংরক্ষণের অভাবে তা অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। বছরজুড়ে পেতে টমেটো সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ ব্যবহার করা হতো।

এ সংরক্ষণ পদ্ধতিতে ব্যয় বাড়ায় টমেটোর দাম থাকে ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এতে ভোক্তা যেমন বেশি টাকায় টমেটো কিনতে পারতো না তেমনি টমেটোর মান নিয়ে থাকতো বিভিন্ন প্রশ্ন। এছাড়াও অল্প সময়ের মধ্যে টমেটো বিক্রির বিষয় থাকায় কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতো। নানা সব প্রতিবন্ধকতার কথা চিন্তা করেই নতুন ধরনের এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়।

এ প্রযুক্তির উদ্ভাবক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের ঊদ্ধর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলাম ফেরদৌস চৌধুরী জানান, টমেটো মৌসুমে সংরক্ষণের তেমন সুযোগ না থাকায় এর দাম পাওয়া যেত না। এতে কৃষি অর্থনীতিতেও একটি ক্ষতি হতো। নানা সমস্যার কথা চিন্তা করে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়।

তিনি আরও জানান, মৌসুমে আধাপাকা ভালোমানের টমেটো সংরক্ষণ করে তা পরিষ্কার করে নিয়ে স্যানিটাইজ করলে অনুজীব ধ্বংস হয়। স্যানিটাইজে ব্যবহার করতে হয়, ডিমের খোসা থেকে উৎপাদিত ক্যালসিনেটেড ক্যালসিয়াম দ্বারা। ১০ লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার পরিমাণ ক্যালসিনেটেড ক্যালসিয়াম ব্যবহার করে পানিতে টমেটো ২/৩ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হয়। পরে উঠিয়ে নিয়ে পানি ঝরানোর পর উন্মুক্ত বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে। এতে সালমোলিন বা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়।

এরপর এসব টমেটো একটি আবদ্ধ পাত্রে ২৪ ঘণ্টা মুখ বন্ধ অবস্থায় রাখতে হবে। মুখ বন্ধ করার পূর্বে বক্সের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে ১-মিথাইল সাইক্লোপ্রোপেন দিতে হয়। ২৪ ঘণ্টার এ প্রক্রিয়ায় টমেটোর মধ্যে থাকা ইথিলিনের কার্যকারিতা অকার্যকর করে দেওয়া হয়। এর ফলেই মূলত টমেটো তার বর্তমান অবস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

পরে তা ছিদ্রযুক্ত (পারফোরেটেড) বক্সে ঘরে কম তাপমাত্রায় (২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে) রেখে দিয়ে ৩ থেকে ৫ মাস সংরক্ষণ করা যায়। এ পদ্ধতিতে টমেটো সংরক্ষণে খরচও অনেক কমে যাবে। কেউ ইচ্ছে করলে বাড়িতেই এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে বছরজুড়েই স্বাদ নিতে পারবেন টমেটোর।

কোল্ড স্টোরেজে টমেটো সংরক্ষণ করলে যেমন খরচ অনেক বেশি তেমনি এসব টমেটো অনেকটা কুচকে যায়। ঠিকমতো স্বাদও থাকে না। উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে কৃষকরা খুব সহজেই টমেটো সংরক্ষণ করতে পারবেন। সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার খরচ কম, তাই কম দামে সারাবছর ধরেই এর স্বাদও পাবেন বলে জানান তিনি।

পোস্ট হারভেস্ট বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাফিজুল হক খান বলেন, এ পদ্ধতিতে টমেটো সংরক্ষণ করলে খরচ অনেক কমে যায়। ইতোমধ্যে আমরা টমেটো সংরক্ষণের প্রযুক্তি নিয়ে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তারা এ মৌসুম থেকেই টমেটো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।

শিহাব খান/এমএসআর