ফরিদপুরে চিকিৎসকের পরিবর্তে নার্স দিয়ে অস্ত্রোপচারকালে নবজাতকের কপাল কেটে ফেলার ঘটনায় আল-মদিনা ডায়গনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান, দুই পরিচালকসহ চারজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১০জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। রোববার (১৬ জানুয়ারি) নবজাতকের বাবা শফিক খান মামলার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। 

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, এ মামলায় মদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান মিসেস রহিমা রহমান, তার দুই ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকারিয়া মোল্লা ও মো. আল হেলাল মোল্লা এবং ওই হাসপাতালের আয়া চায়না বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে চায়না বেগমকে ওই ক্লিনিকের জ্যেষ্ঠ নার্স হিসেবে দাবি করা হয়। কিন্তু পরে পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে চায়না বেগম স্টাফ নার্স নয়, তিনি একজন আয়া।

ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল গফফার বলেন, এ মামলার আসামি হিসেবে মো. জাকারিয়া মোল্লা, মো. আল হেলাল ও চায়না বেগমকে গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে রোববার বিকেলে জেলার মুখ্য বিচারিক আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত আজ রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য করে ওই তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

সরেজমিনে হাসপাতালে দেখা যায়, নবজাতকটি ফুপু হোসনে আরা খানমের কোলে ঘুমাচ্ছে। তার মা রূপা বেগম অন্য একটি বেডে ঘুমাচ্ছেন।

ফুপু হোসনে আরা বেগম বলেন, বাচ্চা সুস্থ আছে। চিকিৎসকও বলেছেন তার কোনো সমস্যা নেই। তবে মা একটু অসুস্থ। তিনি শনিবার তিনবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ওই সময়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

কর্তব্যরত নার্স ঝিনু আক্তার বলেন, শিশুটির ওজন দুই কেজি। রাতে শিশুটিকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন সুস্থ আছে।আমরা আশা করছি দ্রুত মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে।

এদিকে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে এডিএম মো. লিটন আলীকে। অন্য তিন সদস্য হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, সদরের ইউএনও মো. মাসুদুল আলম, সদরের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাতেমা করিম।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের এনডিসি মো. আশীকুজ্জামান বলেন, রোববার কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই ক্লিনিকটি ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

প্রসঙ্গত, আল মদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীত দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। এ হাসপাতালটি স্থাপিত হয় ২০০৭ সালে।২০১৫ সাল থেকে এ হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।

শনিবার সকাল ৮টার দিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের দক্ষিণ ময়েজউদ্দিন মন্ডল পাড়া গ্রামের শফিক খানের (৩২) স্ত্রী রূপা বেগমকে সন্তান প্রসবের জন্য ওই হাসপাতালে আনা হয়। সন্তান প্রসবকালে ওই হাসপাতালের আয়া চায়না বেগম অস্ত্রোপচার করলে নবজাতকের কপালের বাম ভ্রুর ওপরে কিছু অংশ কেটে যায়। তাকে ৯টি সেলাই দেওয়া হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়।

জহির হোসেন/এসপি