দীর্ঘ ২১ বছর পর যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভা নির্বাচনে একটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে রোববার (১৬ জানুয়ারি) ভোট গণনা শেষে বর্তমান মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল ১ হাজার ২৪৯ ভোট বেশি পান।

জানা গেছে, ঝিকরগাছা পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের খাদেমুল ইনসান দাতব্য চিকিৎসালয় কেন্দ্রের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করায় চূড়ান্ত ফলাপল ঘোষণা করা যায়নি। নির্বাচনের তিন দিন আগে কেন্দ্র পরিবর্তন নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিটের কারণে শেষ সময়ে এসে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

আর এ জটিলতায় পড়ে কাউন্সিলর পদে ভোট বেশি পেলেও একরামুল হক খোকনকে ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ঘোষণা করা যাচ্ছে না। একই অবস্থা সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রেও। ভোটে এগিয়ে থাকলেও বিজয়ী ঘোষণা শুনতে তাকে অপেক্ষা করতে হবে।

যশোরের অতিরিক্ত নির্বাচন অফিসার আতিকুল ইসলাম বলেন, ১৪টি কেন্দ্রের মধ্যে খাদেমুল ইনসান দাতব্য চিকিৎসালয় কেন্দ্র নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। এ কারণে ভোট গ্রহণ ও গণনা করা হলেও কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।

১৪ কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফল মতে, নৌকা প্রতীকে ৭ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হতে চলেছেন বর্তমান মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান হাসান সামাদ নিপুন কম্পিউটার প্রতীকে ৬ হাজার ১২৬ ভোট পেয়েছেন।

আর জগ প্রতীকে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) সেলিমুল হক সালাম ১৯০০, আব্দুল্লাহ আল সাঈদ রেলইঞ্জিন প্রতীকে ১ হাজার ১৩০ ভোট, আমিনুল কাদির নারিকেল গাছ প্রতীকে ১ হাজার ৩৫, ইমতিয়াজ আহমেদ শিপন মোবাইল ফোন প্রতীকে ৬২৪ ভোট ও জাহাঙ্গীর আলম মুকুল ৩৩ ভোট পেয়েছেন। 

এদিকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ১ নং ওয়ার্ডের নজরুল ইসলাম, ২ নং ওয়ার্ডে আরিফুজ্জামান আরিফ, ৩ নং ওয়ার্ডে সাজ্জাতুল জামান রনি, ৪ নং ওয়ার্ডে আলীম গাজী, ৬ নং ওয়ার্ডে নুরুজ্জামান বাবু, ৭ নং ওয়ার্ডে আমিরুল ইসলাম রাজা, ৮ নং ওয়ার্ডে তারিকুজ্জামান ও ৯ নং ওয়ার্ডে ইউনুস আলী।

সংরক্ষিত ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডে শ্যামলী খাতুন এবং ৭, ৮, ৯ ওয়ার্ডে নাজমুন নাহার নাজু বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তবে ফলাফল প্রকাশ স্থগিত থাকায় ৫ নং ওয়ার্ডে একরামুল হক খোকন ও ২, ৩, ৪ ওয়ার্ডে জেসমিন সুলতানা ভোটে এগিয়ে থাকলেও বিজয়ী ঘোষণা শুনতে নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। 

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক জানান, দীর্ঘ ২১ বছর পর নির্বাচন হওয়ায় সাধারণ মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৬৬ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৪টি ভোটকেন্দ্রের ৮৬টি বুথে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৯ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঝিকরগাছা পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ২ এপ্রিল। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল। সীমানা জটিলতা কাটিয়ে ২১ বছর পরে পুরাতন নির্বাচনের জন্য গত বছরের ৩০ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয়।

জাহিদ হাসান/এসপি