বিশ্বের পরিচিত চিয়া ও কিনোয়ার প্রথম চাষ নীলফামারীতে
বিশ্বে উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ও সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত চিয়া সিড ও কিনোয়ার এই প্রথম চাষ শুরু হচ্ছে নীলফামারীতে। ওষধি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর দানাশস্য চিয়া সিড ও কিনোয়া চাষে এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় কৃষকদের মাঝে এ নিয়ে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আগ্রহ জাগছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান মিয়া পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতক জমিতে চিয়া সিড ও ১২ শতক জমিতে কিনোয়া আবাদ করেছেন, যা ইতোমধ্যে ঘরে তোলার উপযোগী। কৃষক শাহাজাহানের পাশাপাশি পাশের গ্রামের কৃষক বিহারি রায় ২০ শতক জমিতে চাষ করেছেন সুপার ফুড কিনোয়া।
বিজ্ঞাপন
কাউনের বিকল্প কিনোয়া
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ‘কিনোয়া’ দানাদার খাদ্যশস্য। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল, পটাশিয়াম ও আয়রন থাকায় নাসার মহাকাশচারীরা এটি খেয়ে থাকেন। গ্লাইসেন ইনডেক্স কম থাকায় ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও এটি বেশ উপকারী।
কিনোয়ায় ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ প্রোটিন আছে। ওজন কমাতেও এটি সহযোগিতা করে। সবজি হিসেবেও কিনোয়া বেশ সুস্বাদু। পোলাও, খিচুড়ি হিসেবে খাওয়া যায়; আবার সালাদ, স্যান্ডউইচেও ব্যবহার করা যায়। রান্না করলে এই খাবার পরিমাণে চার গুণ বাড়ে। পেটে দীর্ঘ সময় থাকে। স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়া কাউনের বিকল্প হিসেবে কিনোয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ঔষধি ফসল চিয়া সিড
চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ। মেক্সিকোসহ ইউরোপের দেশগুলোয় চিয়া একটি ঔষধি ফসল হিসেবে চাষ হয়। সেখানকার প্রাচীন আদিবাসী অ্যাজটেক জাতির খাদ্যতালিকায় থাকা চিয়া সিড বা বীজকে তারা সোনার থেকেও মূল্যবান মনে করতেন।
তারা বিশ্বাস করত, এটা তাদের শক্তি ও সাহস জোগাবে। চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক এবং ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে চিয়া সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত।
কৃষক শাহজাহান মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার ২০ শতাংশ জমিতে বাউ চিয়া এবং ১২ শতাংশ জমিতে সুপার ফুড কিনোয়া চাষ করেছি। ফসলও আশানুরূপ হয়েছে। বাজারে সুবিধা পেলে আগামীতে আরও বেশি জমিতে এ ফসল চাষ করব।
আরেক কৃষক বিহারী রায় পোস্টকে বলেন, কৃষি অফিসার উৎসাহ দিয়েছেন এই ফসল আবাদের জন্য। বীজ এনে দিয়েছেন। সেটি লাগিয়েছি। দামি ফসল এটি। আবাদে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফসল দুটি উদ্ভাবনের পর যে চার-পাঁচটি উপজেলায় আবাদ হচ্ছে, তার মধ্যে কিশোরগঞ্জ একটি। বীজ এনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে এখানে দুজন কৃষককে দিয়ে আবাদ শুরু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এগুলো পুরোপুরি নতুন শস্য। চাহিদা রয়েছে অনেক। সুপারশপে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়। রোগবালাই, পরিচর্যা কম বা অন্য ফসলের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুষ্টিপরিপূরক আর অধিক মানসম্পন্ন হওয়ায় বহির্বিশ্বের সুপার ফুড দুটির চাহিদা অনেক বেশি। আশা করি আমাদের দেশে যদি এটি চাষ হয়, তাহলে আমাদের দেশের পুষ্টির অভাব দূর হবে। যেহেতু এই চাষাবাদপ্রক্রিয়া অনেক সহজ এবং তিন মাসেই ঘরে তোলা সম্ভব। তাই আমরা সামনে যেন এই চাষের পরিধি বাড়ে, সে বিষয়ে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই খাদ্য বা চাষাবাদ বাংলাদেশে নেই বললেই চলে খুব কম। তবে বিভিন্ন সুপার শপে এর চাহিদা রয়েছে এটি বাজারজাতকরণে আমরা যোগাযোগ করছি।
এনএ