যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভার ভোটগ্রহণের এক দিন পার হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। উচ্চ আদালতে রিটের কারণে ফলাফল ঘোষণার শেষমুহূর্তে একটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

তবে, রির্টানিং কর্মকর্তারা ফল ঘোষণা না করলেও করোনার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিজয় হয়েছে উল্লেখ করে আনন্দ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে অনুষ্ঠিত আনন্দ মিছিলে নেতৃত্ব দেন চৌগাছা-ঝিকরগাছা আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দীন।

আয়োজকদের দাবি, স্থগিত কেন্দ্রে যদি পুনরায় ভোটও হয় তার পরেও বিজয়ী হবেন নৌকার প্রার্থী মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল। এদিকে, ইভিএম পদ্ধতির ফলাফলে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন নির্বাচনে পরাজিত ৪ মেয়র প্রার্থী ও ৬ কাউন্সিলর প্রার্থী। তারা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে সোমবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

২১ বছর পর ১৬ জানুয়ারি সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ঝিকরগাছা পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা মার্কার প্রার্থী মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল পেয়েছেন ৭ হাজার ৩৭৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কম্পিউটার প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান হাসান সামাদ নিপুণ পেয়েছেন ৬ হাজার ১২৬ ভোট।

১৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩ কেন্দ্রে এক হাজার ২০১ ভোটে এগিয়ে থাকলেও নৌকার প্রার্থী মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামালকে আনুষ্ঠানিক বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্থগিত খাদিমুল ইনসান দাতব্য চিকিৎসালয় কেন্দ্রের ফলাফলের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো মেয়র পদে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করেননি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার।

এদিকে, ঝিকরগাছায় পৌর নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা করা না হলেও করোনার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিজয় হয়েছে উল্লেখ করে আনন্দ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সোমবার ঝিকরগাছা উপজেলা মোড় থেকে পারবাজার পর্যন্ত এ মিছিলে সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও করোনার স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জনসমগম করে আনন্দ মিছিল করেছেন তারা। এ সময় অনেকের মুখে মাস্ক পরতেও দেখা যায়নি। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির মুখে জনপ্রতিনিধিদের এমন কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেজবুকে সমালোচনা ঝড় উঠেছে।

আনন্দ মিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এমপি মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দীন তার বক্তব্যে বলেন, ঝিকরগাছার মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারো প্রমাণ করেছে এই অঞ্চল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ষড়যন্ত্রকারীরা কোনোভাবেই নৌকার বিজয় রুখতে পারেনি। বক্তব্যে তিনি ঝিকরগাছা পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণিতে রূপান্তরের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চৌধুরী রমজান শরীফ বাদশা, যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, সাবেক প্রচার সম্পাদক মোর্তজা ইসলাম বাবু, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাপ্পী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি শামসুর রহমান প্রমুখ।

এদিকে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন নির্বাচনে মেয়র পদে পরাজিত প্রার্থী আবদুল্লাহ আর সাঈদ, ইমতিয়াজ আহমেদ শিপন, এ কে এম আমানুল কাদির টুল্লু ও সেলিমুল হক সালাম। সোমবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেন তারা।

পৃথক আরেক লিখিত আবেদনপত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নির্বাচনে কারচুপি ও ভোট গ্রহণের সময় ফলাফল বদলে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। আবেদনপত্রে সব প্রার্থীর নাম উল্লেখ থাকলেও পৃথক ওই পত্রে স্বাক্ষর করেছেন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিল পদের পরাজিত প্রার্থী নাছিমা খাতুন, পপি বেগম, চিত্রা রাণী কর।

১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরুষ কাউন্সিলর আমিনুর হোসেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলিম হোসেন ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান। তারা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের সহযোগিতায় ভোট গ্রহণের শেষ হওয়ার ৩০ মিনিটি পূর্বে পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে সব ইভিএম মেশিনএকটি কক্ষের মধ্যে নিয়ে কার্ডগুলোর প্রকৃত ফলাফল পরিবর্তন করেছেন। পরাজিত প্রার্থীদের সমর্থনকারী ভোটাররা তাদের ভোট দিলেও ভোটের ফলাফল সংযুক্ত করা হয়নি।

বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান হাসান সামাদ নিপুণ বলেন, ইভিএম পদ্ধতির ভোটগ্রহণে মেয়র পদে কারচুপি করে ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে ফলাফল প্লাস-মাইনাস করার সুযোগ আছে। সেটি করেই নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভোটের তিন দিন আগে কেন্দ্র পরিবর্তন করে ব্যক্তি মালিকানাধীন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী উচ্চ আদালতের রিট করেন। উচ্চ আদালতের আদেশে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত হয়েছে।

নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, সুষ্ঠু ভোট হয়েছে ঝিকরগাছায়। আইনি জটিলতায় ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। ১৪টির মধ্যে ১৩ কেন্দ্রের ফলাফলে ১ হাজার ২০১ ভোটে এগিয়ে আছি। একটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা স্থগিত করেছেন আদালত। ওই কেন্দ্রে ১ হাজার একশর মতো ভোট কাস্ট হয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

এই বিষয়ে সোমবার রাতে যশোরের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। তাই ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২১ বছর পর ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৬৬ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।

জাহিদ হাসান/এমএসআর