প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পরও জনবল ও যানবাহন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বাৎসরিক অভিযান এবং আইন প্রয়োগে জেলার এই দফতরটি সাধ্যমতো চেষ্টা চালালেও সম্পূর্ণতা না থাকায় তুলনামূলক সফলতা কম। কর্মকর্তারা মনে করেন, মঞ্জুরিকৃত পদ অনুসারে জনবল আর যানবাহন থাকলে মাদক নিরোধে আরও কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারতো।

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বরিশাল কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডু জানিয়েছেন, মঞ্জুরিকৃত পদের অনুকূলে শিগগিরই জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। তখন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আরও গতিশীল হবে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জেলায় ১৫৩৪টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয় ১৮৩টি। অভিযানে ২৪৯ জন মাদক বিক্রেতার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ও ৫৮টি নিয়মিত মামলা হয়। অভিযানে ১০ হাজার ২০৯ পিস ইয়াবা, ১৩৫ বোতল ফেনসিডিল, ৩৬ কেজি গাঁজা, বিয়ার ২৪ ক্যান, চোলাই ও বিদেশি মদ ১৫ লিটার, ১৬টি গাঁজা গাছ উদ্ধার করে। এছাড়া মাদক বিক্রির ৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়ে।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালে বরিশাল নগরীর ভাটিখানায় কার্যালয় স্থাপন ও কার্যক্রম শুরু করে বরিশাল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এই কার্যালয়ে মঞ্জুরিকৃত মোট ৩৬টি পদ রয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে ২২ জন বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন। শূন্যপদ রয়েছে ১৪টি। পদসমূহের মধ্যে উপপরিচালকের একটি, পরিদর্শক দুটি, সিপাহি ৮টি, সহ-প্রসিকিউটর দুইজন, এসআইয়ের একটি পদশূন্য।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে গোয়েন্দা বিভাগের নিজস্ব কোনো যানবাহন নেই। রয়েছে একটি গাড়ি। যার কারণে অনেক সময় অভিযানে ব্যাহত হচ্ছে। জনবলের সংকটতো আছেই। জনবল ও যানবাহন সংকট দূর হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কার্যক্রমও আরও গতিশীল হবে। বিষয়টি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে খুব শিগগির পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বিষয়টি স্পষ্ট যে লোকবল নেই। বাংলাদেশের আদালত যত মামলা রয়েছে তার অর্ধেক মামলাই মাদক সংক্রান্ত। সমাজবোধ, পরিবার ধ্বংস করার ক্ষেত্রে মাদক একটি আলোচিত বিষয়। এই জিনিসটিকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে সরকারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, অথচ আমরা দেখছি সমস্ত কংক্রিটের উন্নয়ন হচ্ছে, মানসিক উন্নয়ন হচ্ছে না। মানসিক উন্নয়নের জন্য সমাজের সমস্যাকে চিহ্নিত করে প্রাধান্য দিতে হবে। সরকারের অর্থবছরের বিষয় হওয়া উচিত মাদক প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ। কিন্তু যখন দেখি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের যে জনবল দরকার তা নেই, তখন মাদকবিরোধী অভিযানের নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

আমি মনে করি বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় ও ভয়ংকর সমস্যা মাদক। এই সমস্যা সমাধানে কার্যক্রম চালানো দফতরগুলোতে প্রয়োজনীয় লোকবল ও যানবাহন দিতে হবে অতি দ্রুত। নয়তো আমরা মাদক আগ্রাসন মোকাবিলা করতে পারব না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএসআর