বরগুনার তালতলী উপজেলায় বেসরকারিভাবে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে জোর করে ফসলি জমি ও সরকারি জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫০ একর জমির আধা পাকা আমন ধানের ক্ষেতে ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে ফসল। কেউ কেউ বলছেন, যারা দখলে বাধা দিচ্ছেন, তাদের নামেই দেওয়া হচ্ছে মিথ্যা মামলা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বরগুনার তালতলী উপজেলার খোট্টারচড় এলাকায় ‘বদলা চাষি’ নিয়ে ৩৬ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন ফাতেমা বেগম। ক্ষেত যখন ফসলে ভরপুর, তখনই আধা পাকা ধানে মই দিয়েছে বেসরকারিভাবে নির্মাণাধীন ৩০৭ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।

ফাতেমা বেগমের অভিযোগ, ধান পুরোপুরি পাকার আগ মুহূর্তে চারদিক থেকে বাঁধ দিয়ে ধান নষ্ট করে বালু ভরাটের কাজ শুরু করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেটে নিয়েছে তার বসতঘরের পাশে থাকা শতাধিক গাছ, দখল করে নিয়েছে তার বসতঘরও।

কান্নায় ভেঙে পড়ে ফাতেমা বলেন, স্বামী হারিয়ে তিন ফসলি জমিতে ধান চাষ করেই দুবেলা খাবার জোটে। সেই জমি জোর করে দখল করে নিয়েছে ‘আই সো টেক’ নামের একটি কোম্পানি। উপায় না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়ায় আরও ক্ষিপ্ত হয়েছে তারা। এখন দখল করে নিয়েছে পুরো জমি। জমিতে পা রাখলে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠাবার হুমকি দিচ্ছে বিদ্যুকেন্দ্রের লোকজন।

ফাতেমা বেগমের মতো অবস্থা পুরো খোট্টারচড় এলাকার কৃষকদেরও। কারও এক একর আবার কারও পাঁচ একর ফসলি জমি আবার কারোর বসতঘর দখল করে নিচ্ছে।

কৃষক সুলতান মিয়া, আবু জাফর, সোহেল মিয়াসহ একাধিক কৃষকরা বলেন, ক্ষেত যখন ফসলে ভরপুর, তখনই হঠাৎ ৫০ একর জমি নিয়ে চারদিক থেকে মাটির বাঁধ দিয়ে বালু ভরাটের কাজ শুরু করেছে বেসরকারিভাবে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা প্রতিষ্ঠান আই সো টেক।

দুলাল সিকদার নামে ভুক্তভোগী এক কৃষক বলেন, জোর করে ফসলি জমি দখলে বাধা দেওয়ায় কয়েক দফা চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। তাদের ক্ষমতার কাছে সবাই অসহায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সবাইকে কিনে নিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

তবে এ ব্যাপারে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাওসার হোসেন বলেন, কৃষকদের জমি দখলের ও ফসল নষ্টের অভিযোগ পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি। এরপর আমি বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে বালু ভরাট বন্ধ করার আদেশ দিয়ে নষ্ট হওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণ দিতে বলি। কিন্তু তারা আমাকেও অমান্য করে আবার বালু ভরাট শুরু করলে প্রথম দিনের অভিযানে বালু ভরাট করা ড্রেজারের ১০০ পাইপ জব্দ করি।

এরপর আবারও তাদের লিখিত নোটিশ করি। দুদিন বন্ধ রেখে আবারও আধাপাকা ধানে বালু ভরাট শুরু করলে স্থানীয়রা আমাকে খবর দিলে আমি ওই দিন তালতলী না থাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে পাঠাই। তিনি গিয়ে সত্যতা পেয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

ইউএনও আরও বলেন, ব্যক্তিমালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানের প্রায় ১০ একর জমি দখল করেছিল তারা। আমি সেখানে গিয়ে লাল নিশান টানিয়ে দিয়ে এসেছি। এটি বেসরকারি বিদ্যুৎ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলে সরকার তাদের থেকে বিদ্যুৎ কিনে নেবে। কিন্তু তার মানে এই না যে তারা কখনো স্থানীয় গরিব মানুষের পেটে লাথি মারবে। তারা আবার কখনো সরকারের সম্পদ জোর দখল করবে, উপজেলা প্রশাসন এটা কখনোই হতে দেবে না। তাতে আমি এখানে থাকি আর না থাকি। আমি গরিব কৃষকদের হক নষ্ট হতে দেব না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ