নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত উপজেলাগুলোতে দিন দিন বাড়ছে বরই (কুল) চাষ। এই বরেন্দ্র এলাকার মাটির গুণগত মান ভালো। যার ফলে এই উপজেলাগুলোতে কৃষি খাতে অনেকটাই সম্ভাবনাময় বরই চাষ। বর্তমানে সারাদেশে আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত হয়েছে এই জেলা। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় বরই চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে নানান জাতের বরই সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বরই। শুরুতেই বাজারদর ভালো থাকার ফলে সন্তোষ প্রকাশ করছেন বরই চাষিরা। স্বল্প মেয়াদে অধিক ফলন ও লাভবান হওয়ার ফলে বরই চাষে আগ্রহের সীমা নেই এলাকার চাষিদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এবার জেলায় বরইয়ের আবাদ হয়েছে ৩৪৩ হেক্টর জমিতে। এই মৌসুমে বরই এর সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫৭০ মেট্রিক টন। আর পার হেক্টর জমিতে ৭৫০ টন।

উপজেলার ওয়ারী, সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, রানীনগরে ৩ হেক্টর, আত্রাইয়ে ৬ হেক্টর, বদলগাছীতে ১০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২০ হেক্টর, পত্নীতলায় ২০ হেক্টর, ধামইরহাটে ২০ হেক্টর, মান্দায় ১২ হেক্টর, পোরশায় ১০২ হেক্টর, সাপাহারে ২০ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ৭০ হেক্টর জমিতে বরইয়ের আবাদ করা হয়।

নিয়ামতপুরের বরইচাষি ফয়সাল আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরে তিনি বরই চাষ শুরু করেন। আমি ১২ বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে ৪০ বিঘার ওপরে আম এবং বরইয়ের একটি মিশ্র বাগান তৈরি করেছি। আবহাওয়া ভালো ও মাটির গুণগত মান ভালো হওয়ার ফলে বরইয়ের উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে বাজারে বলসুন্দরী জাতের বরই কেজিপ্রতি পাইকারি বিক্রয় হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। আমার বাগান থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় বরই পাঠাই।

বরইচাষি ইমরান হোসেন বলেন, তিনি একজন ফলচাষি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বরই বাগান দেখে এসে বাগান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ হই। যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন এলাকায় তিনি ৬০ বিঘা বরইয়ের বাগান করেছেন। অন্য ফসলের তুলনায় বরই অধিক লাভজনক চাষ বলেও জানান তিনি। আমের তুলনায় খুব কম সময়ের মধ্যে বরই পাওয়া যায়। বরই বাগানে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ ঢাকা পোস্টকে জানান, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় সব ধরনের ফসলই ভালো ফলন হয়েছে। চাষিরা এখন বরই (কুল) চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং বেশ লাভবান হচ্ছেন। জেলায় এবার বরই চাষ হচ্ছে ৩৪৩ হেক্টর জমিতে।

তিনি জানান, কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে বিভিন্ন জাতের বরই। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো নারকেল, বলসুন্দরী, আপেলকুল, সবজিসহ দেশি-বিদেশি অনেক জাত। তবে বেশির ভাগ চাষিরা বলসুন্দরী ও আপেলকুল চাষ করছেন। বরই চাষ একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকরা এই ফল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

তিনি আরও জানান, বরই চাষে তেমন বেশি সময় লাগে না। স্বল্প সময়ে উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় এটি একটি লাভজনক চাষ বটে। যার ফলে কৃষকেরা বর্তমানে বরই চাষে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছেন। বরই চাষে কৃষিখাতে একটি নতুন সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

দেলোয়ার হোসেন/এমএসআর