পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুই হাত ও ডান পা হারিয়ে জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে ২৫ বছরের যুবক আশিক আহমেদের। এ ঘটনার পর দিনমজুর বাবার শেষ সম্বল কৃষি জমি বিক্রি করে বিচ্ছিন্ন হওয়া পায়ে একটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে হাঁটাচলা করছেন আশিক। তবে দুই মাসের সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে না পারার আক্ষেপে প্রতিনিয়ত কাঁদছেন তিনি।

আশিক আহমেদ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বামনপাড়া গ্রামের দিনমজুর মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে। ২০১৫ সালে স্থানীয় উত্তর কুমরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেছেন তিনি।

একটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে হাঁটাচলা করছেন আশিক

এসএসসি পাসের পর বাবার অভাবের সংসারে সহযোগিতা করতে কাজ শুরু করেন কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নাগেশ্বরী জোনাল অফিসে। এরপর ২০১৯ সালের মে মাসে তিনি বিয়ে করেন।   

অফিসের নির্দেশে একই সালের নভেম্বর মাসে নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন সরকারের বাড়িতে সেচের নতুন সংযোগের মিটার ও ট্রান্সফরমার উত্তোলন করতে যান আশিক। কাজ শুরুর আগে আশিক বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করতে অফিসের লাইন টেকনিশিয়ানকে জানান। তখন লাইন বন্ধও করা হয়।

কিন্তু কাজ শেষ না হতেই আশিকের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স না নিয়ে হঠাৎ করে লাইন চালু করে দেওয়া হয়। এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে ঝলসে যায় আশিকের দুই হাত ও পা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

বিদ্যুতায়িত হয়ে ঝলসে যায় আশিকের দুই হাত ও পা

রংপুর মেডিকেলে নিয়ে গেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঠানো হয়। ঢাকায় চিকিৎসারত অবস্থায় তার দু-হাত ও এক পা কেটে ফেলা হয়। এতে তার পরিবারের অনেক টাকা খরচ হয়।

কেউ আমাকে দুটি কৃত্রিম হাত লাগিয়ে দিলে সবার আগে আমার ছেলেকে জড়িয়ে ধরব। তাকে অনেকক্ষণ আদর করব। ছুঁয়ে দেখব। তাকে ছুঁতে পারি না বলে মন কাঁদে আমার।

আশিক আহমেদ

আশিকের মা আনজিনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে দুই হাত ও একটি পা হারিয়ে ফেলে। সে এখন নিজ হাতে খেতে পারে না। একা বাথরুম সারতে পারে না। খুব কষ্ট লাগে তাকে দেখে। তার স্ত্রী-সন্তান আছে। জানি না শেষ জীবনে তার কি অবস্থা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবদার, ছেলেটার জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিন।

আশিকের প্রতিবেশী মজিবর রহমান বলেন, আশিক বিদ্যুৎ বিভাগে দিনমজুরের কাজ করছিলেন। হঠাৎ একদিন বিদ্যুতের খুঁটিতে দুর্ঘটনায় তার দুই হাত ও একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চিকিৎসা করতে করতে তার পরিবার নিঃস্ব। তার বাবা বৃদ্ধ। তবুও তিনি দিনমজুরের কাজ করছেন। তিনি মারা গেলে পরিবারটিকে হয়তো না খেয়ে থাকতে হবে। তার দুটি হাত লাগিয়ে কোনো একটা কাজের ব্যবস্থা করলে হয়তো পরিবারটি ভালো থাকবে।

এ বিষয়ে ভিতরবন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান খন্দকার আমিনুল ইসলাম বাচ্চু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আশিককে যা সহযোগিতা করা হয়েছে, সেটি খুবই সামান্য। তাকে আমরা পঙ্গু ভাতা করে দিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। সরকারিভাবে তার পরিবারকে সহযোগিতা করা হলে অনেক উপকৃত হবে। তার পরিবারকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাই।

এছাড়া আশিক আহমেদকে কেউ সহযোগিতা বা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে যোগাযোগ করা যাবে (০১৭২৩৯৮৩৬১৬) নম্বরে। 

এমএএস