ভোলা সদর উপজেলার উত্তরে ১৯১১ সালে তৎকালীন জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক নিজ উদ্যোগে পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়টি শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। জ্ঞানের আলো ছড়ালেও দীর্ঘ এই সময়ে বিদ্যালয়ের তেমন কোনো অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি। শ্রেণিকক্ষে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ শিক্ষার্থীকে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। ফলে ক্লাস নিতে হিমশিত খাচ্ছেন শিক্ষকরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, একটি মাত্র দ্বিতল ভবনে কক্ষ রয়েছে সাতটি। যার মধ্যে একটি কম্পিউটার ল্যাবের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। বাকি ৬ কক্ষে প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে।

এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৬০ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ১২০ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ১৫৩ জন, নবম শ্রেণিতে ১৭০ জন, দশম শ্রেণিতে ১৪৪ জন ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে এসব শিক্ষার্থীর পাঠদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। প্রত্যেক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্টে গাদাগাদি করে বসে পড়ালেখা করতে হচ্ছে। এক বেঞ্চে ৫-৬ জনকে বসতে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ক্লাস করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ একতলা ভবনটি লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ফরহাদ হোসেন বলে, আমাদের বিদ্যালয়টি শত বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসছে। এই স্কুলে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। আমাদের একটি মাত্র ভবনে ৬টি কক্ষ। আমাদের ক্লাসে ১৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। কিন্তু আমাদের রুমটি ছোট হওয়ায় একসঙ্গে সব শিক্ষার্থীর ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রব জানান, আমাদের স্কুলটি ভোলার প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। বর্তমানে ভবন সংকটের কারণে পাঠদানে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একটি মাত্র দ্বিতল ভবনে ৬টি রুমে ৮০০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান দিতে হচ্ছে। প্রত্যেক ক্লাসে শিক্ষার্থী প্রায় দেড় শতাধিক।

তিনি আরও বলেন, নতুন ভবনের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা প্রতিকার পাইনি। আমাদের নতুন ভবন নির্মানের জন্য অনেক জায়গা থাকার পরও ভবন না পেয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে হিমশিত খেতে হচ্ছে।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কাচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম নকীব জানান, ভবন সংকটের কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এই ভবন সংকট সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাদব চন্দ্র দাস জানান, পরানগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ভোলার অনেক পুরাতন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একটি মাত্র ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছে এমন একটি আবেদন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পেয়েছি। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত ভবন সংকটের এই সমস্যা সামাধান হবে।

ইমতিয়াজুর রহমান/এসপি