ফরিদপুরের নগরকান্দায় ভাঙনের কবলে পড়ে একটি মন্দিরসহ ১২টি স্থাপনা কুমার নদে ধসে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে নগরকান্দা থানা, সরকারি এমএন একাডেমির দুটি নতুন ভবন। এছাড়া ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উপজেলা কেন্দ্রীয় কালীমন্দির, নগরকান্দা বাজার ও সাব-রেজিস্ট্রি ভবন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে এ ভাঙন শুরু হয়। তবে ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে। যা আজ মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।

উপজেলার গাঙ্গজগদিয়া এলাকায় অবস্থিত নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছন থেকে শুরু করে পশ্চিমে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস পর্যন্ত ২৩০ মিটারব্যাপী অংশজুড়ে এ ভাঙন চলছে। নগরকান্দা পৌরসভার পাঁচ ও সাত নম্বর ওয়ার্ডের অংশ বিশেষে এ ভাঙন চলছে। ভাঙনের কারণে ওই এলাকার বাসিন্দারা চরম ভীতিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে।

নদে ইতোমধ্যে গাঙ্গজগদিয়া মহল্লায় অবস্থিত গঙ্গামন্দির, উজ্জল মালো, নিত্য মালো, নীল কমল মালো, সুব্রত মালো, বিশ্বেশ্বর মালো, আনন্দ মালো, সঞ্জয় পাল, কুটিশ্বর মালো, উজ্জল বিশ্বাস ও মোকাররম হোসেনের ঘর ধসে গেছে। এরমধ্যে গঙ্গামন্দির ও উজ্জল মালোর বাড়ি পাকা। বাকিগুলো সেমি পাকা ছিল।

উজ্জল মালো অভিযোগ করে বলেন, দেড় বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই এলাকায় খনন কাজ করে। ওই সময় খননযন্ত্র বসিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি মাটি তোলায় আমাদের এ সর্বনাশ হয়েছে। ওই সময় এ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কোনো কথায় কর্ণপাত করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানান, গত আগস্ট মাসে নদের ওই অংশে একটি খননযন্ত্র বাসিয়ে আশপাশের কায়েকটি পুকুর ভরাট করা হয়। প্রায় এক মাস ধরে এ কর্মযজ্ঞ চলে। নদ থেকে অবৈধভাবে মাটি তোলায় এ সমস্যা হয়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, নদী খনন করার নামে তারা বালুর ব্যবসা করছেন। গভীর করে নদী খনন করে যেভাবে বালু তুলে নিচ্ছে, এ কারণে নদীর পাড় ভেঙে পড়ছে।

সংবাদ পেয়ে গতকাল সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেতী প্রু, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এন এম আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেতী প্রু বলেন, নদের পাড়ে ফাটল হওয়ায় আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে জানিয়েছি। তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এ ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও পাউবোকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, তিনি আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মাপা হয়েছে। ২৩০ মিটার এলাকাজুড়ে এ ভাঙন চলছে। তবে প্রতিনিয়ত ভাঙনের পরিধি বাড়ছে। নদ খননের জন্য পাড় দেবে গেছে, এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তবে নদের গভীরতা আগের চেয়ে এক থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির চাপও বাড়ছে। গাবগাছ, বাঁশ দিয়ে ওই এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যা গতকাল বুধবার থেকে শুরু হবে।

জহির হোসেন/এমএসআর