সিজারের সময় চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের ডান হাতের কনুইয়ের হাড়ের জয়েন্ট ছুটে যাওয়ার ঘটনায় ফরিদপুরের আরামবাগ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে এ আদেশ দেন ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লা এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত আরামবাগ হাসপাতালে যান সিভিল সার্জন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফরিদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফতেমা করিম।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে ১০ শয্যার ওই হাসপাতালে যে সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স থাকা প্রয়োজন তা পাওয়া যায়নি। ওই সময় হাসপাতালের মালিকপক্ষ কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। উপস্থিত ছিলেন ম্যানেজার আলী চৌধুরী। পরে আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক মো. জোবায়েরকে ফোন দিয়ে ডেকে আনা হয়।

আরামবাগ হাসপাতালের ম্যানেজার আলী চৌধুরী জানান, এ হাসপাতালে শুধুমাত্র আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক নিয়োগপ্রাপ্ত। আর কোনো নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক নেই।

অথচ ১০ শয্যার একটি হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসককে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করার কথা। ছয়জন নিয়োগপ্রাপ্ত সেবিকা থাকার কথা থাকলেও তিনজন নিয়োগপ্রাপ্ত সেবিকা পাওয়া যায়।

এ সময় বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য চিকিৎসক, নার্স ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় ওই হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান। যে সব রোগীরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের মধ্যে যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া এবং যারা অসুস্থ তাদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থনান্তরের নির্দেশ দেন সিভিল সার্জন।

জানা গেছে, আরামবাগ হাসপাতালে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিজারের মাধ্যমে একটি ছেলে শিশুর জন্ম দেন মৌসুমী আক্তার মুক্তা নামে এক নারী। তিনি শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলামের স্ত্রী। এটি ছিল তাদের দ্বিতীয় সন্তান।

গতকাল মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) আরিফুল ইসলাম ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের নিকট ‘আরামবাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের রোগীর প্রতি অবহেলার দরুণ ক্ষতি প্রসঙ্গে’ একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ১৩ ডিসেম্বর আরামবাগ হাসপাতালে সিজারের সময় ডাক্তারদের অবহেলায় আমার নবজাতক শিশুর হাতে অতিরিক্ত টান লেগে কনুই থেকে হাড়ের জয়েন্ট ছুটে গেছে। বাচ্চাকে শারীরিক নির্যাতন, আমাদের আর্থিক ও মানসিক নির্যাতনের করার জন্য হাসপাতাল ও ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

এ ব্যাপারে আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে আমার স্ত্রীর সিজার করা হয় বেসরকারি ওই হাসপাতালে। অপারেশন থিয়েটারে নবজাতক চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। তখন চিকিৎসক শারমিন সুলতানা জুই আয়াকে নবজাতকের ডান হাত মালিশ করার পরামর্শ দেন। পরে এক্সরে করে দেখা যায় শিশুটির হাতের কনুইয়ের হাড়ের জয়েন্ট ছুটে গেছে। শিশুটি বর্তমানে ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত হেলথ অ্যান্ড হোপ সেন্টারে চিকিৎসক অধ্যাপক সানোয়ার ইবনে সারামের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে  আরামবাগ হাসপাতালে এ অভিযান চালানো হয়। পরিদর্শনকালে ওই হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ে। চিকিৎসক শারমিন নিজে বিএসএস ও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতালের চিকিৎসক না হয়েও হাসপাতালের নামফলকে তার এ পরিচিতি লিখেছেন। এছাড়া ফার্মাসিস্ট রাজিব হোসেন নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

সিভিল সার্জন বলেন, আরামবাগ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একটি বেসরকারি হাসপাতাল চালাতে চিকিৎসক ও নার্সসহ যে পরিমাণ জনবল ও সুযোগ সুবিধা থাকা প্রয়োজন সে শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালটি বন্ধ থাকবে।

শিশুটির বিষয়ে জানতে চাইলে আরামবাগ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত হয়েছে। ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা আগামীতে এ ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করব।

হাসপাতাল বন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, হাসপাতালটির কিছু ত্রুটি থাকায় সিভিল সার্জন বন্ধ ঘোষণা করেছেন।

জহির হোসেন/আরএআর