মাছ ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মালো

‘দুই বছর আগে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে বিল্ডিংটা করেছিলাম। কুমার নদের ভাঙনে চোখের সামনে আমার সেই সাধের বিল্ডিংটা ধসে পড়ল। পরে উপায় না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঘরের সব আসবাবপত্র বের করে নিয়ে আসি। এখন বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীদের ঘরে থাকতে হচ্ছে। আমার সাধের বিল্ডিং নদী ভাঙনে শেষ হয়ে গেল।’

এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গাঙ্গজগদিয়া মহল্লার মাছ ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মালো (৪৭)।

গত সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুমার নদের ভাঙনে তার ১৬ লাখ টাকার একটি এক তলা পাকা ভবন ও আড়াই লাখ টাকার দুটি সেমি পাকা ঘর ধসে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার গাঙ্গজগদিয়া এলাকায় অবস্থিত নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছন থেকে শুরু করে পূর্বে রোকন দারোগার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত একটি মন্দিরসহ ১২টি স্থাপনা কুমার নদে ধসে পড়েছে। নগরকান্দার সরকারি গোডাউনের পেছন থেকে পশ্চিম দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে ফাটল। তবে আশার কথা হচ্ছে ভাঙন রোধে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার (১৯ জানুয়ারি) থেকেই  ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গাব ও মেহগনি গাছের বল্লি গাড়ার কাজ শুরু হয়েছে। আর ওই অঞ্চলে নতুন করে ফাটল বা ভাঙন দেখা দেয়নি।

বল্লি গাড়ার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক নয়ন মোল্লা (৩২) বলেন, আমরা মোট পাঁচজন শ্রমিক গতকাল বুধবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে বল্লি গাড়ার কাজ করছি। আগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গাছ গাড়া হবে। পরে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন বুঝে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে এ কাজ করা হবে।

আরেক শ্রমিক হাসান মণ্ডল বলেন, আমরা মেহগনি ও গাব গাছের বল্লি গাড়া শুরু করেছি। মাটির ধরণ ভালো থাকলে এ কাজ দ্রুত হয়। না হলে বেগ পেতে হয়। ভাঙনের ২৩০ মিটার জায়গায় তিন সারিতে এ গাছগুলো গাড়া হবে।

গাঙ্গজগদিয়া মহল্লার বাসিন্দা গৃহবধূ লক্ষ্মী মালো (৪১) বলেন, সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে এ ভাঙন শুরু হয়। তবে ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করে সন্ধ্যা ৭টার পরে। ওই সময়ই আমাদের একটি টিনের ঘরসহ আমাদের আশপাশের বাসিন্দাদের ঘর, মন্দিরসহ ১২টি স্থাপনা ধসে পড়ে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১২টি স্থাপনা ধসে পড়ার পাশাপাশি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নগরকান্দা থানা, সরকারি এমএন একাডেমির দুটি নতুন ভবন,  উপজেলা কেন্দ্রীয় কালী মন্দির, নগরকান্দা বাজার ও সাব রেজিস্ট্রার ভবন।

ভাঙনের কবলে পড়া মহল্লাটির নাম গাঙ্গজগদিয়া। এটি  নগরকান্দা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এ ঘটনা ঘটেছে। বালু উত্তোলন করেছে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

তিনি বলেন, এই বালু উত্তোলনের সময় এলাকাবাসী বাধা দিলেও তারা শোনেনি। বরং তারা এই নদের জায়গা নিজেদের দাবি করে যাচ্ছেতাই ঘটনা ঘটিয়েছে। পাউবোর কর্মীরা পাইপের মাধ্যমে আশপাশের এলাকায় বালু বিক্রিও করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই এলাকায় খনন কাজ করে। ওই সময় খনন যন্ত্র বসিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি মাটি কাটার অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ২০২১ সালের আগস্ট ওই একই জায়গায় খনন যন্ত্র বসিয়ে এক মাসের মতো মাটি খনন করা হয়। যা গাঙ্গজগদিয়াসহ পাশের চৌমুখা গ্রামে পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করে টাকার বিনিময়ে কয়েকটি পুকুর ভরাট করা হয়।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, নদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মাপা হয়েছে। ২৩০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গতকাল বুধবার (১৯ জানুয়ারি)  থেকেই গাব ও মেহগনি গাছের বল্লি গাড়ার কাজ শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় নতুন করে ভাঙন বা ফাটলের ঘটনা ঘটেনি।

জহির হোসেন/আরএআর