একটি বড় হোটেল দিতে চেয়েছিলেন বদরুল ইসলাম। তবে নানা অভাবের কারণে তা করতে পারেননি। পরিকল্পনার পরিবর্তন করে শুরু করেন ছোট ব্যবসা। দুই মাস আগে শুরু করা ব্যবসায় এখন লাভের মুখ দেখছেন বদরুল। তার ভ্রাম্যমাণ দোকানের শিঙাড়া ও সমুচা সবার কাছে হয়ে উঠেছে প্রিয়। প্রতি পিস দুই টাকা ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতারাও কিনছেন আগ্রহের সঙ্গে।

প্রতিদিন সকালবেলা শহরের বড়বাজার ও বিকেলে শহরের নিউ মার্কেট মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানে শিঙাড়া-সমুচা বিক্রি করছেন বদরুল ইসলাম। দিনে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ পিস শিঙাড়া-সমুচা বিক্রি করছেন এই ক্ষুদ্র দোকানি।

বদরুল ইসলাম সাতক্ষীরা শহরের পারকুকরালী গ্রামের মৃত গোলাম রাব্বানীর ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শাহেদ ও শাহরুখ এই দোকানের ক্রেতা। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিঙাড়া-সমুচা ক্রয়কালে জানান, আগেও এখান থেকে শিঙাড়া-সমুচা কিনেছি। খেতেও সুস্বাদু। সে কারণে এদিকে যখন আসি, তখনই কিনি, দামও কম। আবার দেখতেও আকর্ষণীয়।

৩০ পিস শিঙাড়া ও ৩০ পিস সমুচা কিনেছেন শহরের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন। তিনি জানান, আমি আজই দেখলাম। দেখেই কৌতূহলী হয়ে প্রথমে কয়েকটি খেয়ে দেখলাম খুব সুস্বাদু। তারপর বাসায় স্ত্রীর জন্য বেশ কিছু কিনেছি। সাধারণত দোকানে প্রতি পিস শিঙাড়া ও সমুচা পাঁচ টাকা করে বিক্রি হয়। কিন্তু এই দোকানটিতে প্রতি পিসের মূল্য মাত্র ২ টাকা।

ক্ষুদ্র দোকানি বদরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি অন্যের হোটেল শ্রমিকের কাজ করতাম। দুই ভাই দুই বোন আমরা। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ভাই মিলে মাকে নিয়ে বসবাস করি। বাবা মারা গেছেন। ভেবেছিলাম দুই ভাই একসঙ্গে একটি হোটেল করব। তবে টাকা জোগাড় করতে পারিনি। তারপর অল্প টাকায় কীভাবে ব্যবসা করা যায়, সেই চিন্তা থেকে দুই ভাই মিলে একটি ভ্যানকে ১৫ হাজার টাকায় বিশেষভাবে প্রস্তুত করি। তারপর দুই মাস আগে থেকে শিঙাড়া-সমুচার ব্যবসা শুরু করেছি।

তিনি বলেন, আমার বড় ভাই ফজলুল ইসলাম বাড়িতে শিঙাড়া-সমুচা তৈরি করে দেয়। আমি সকাল-বিকেলে সেগুলো বিক্রি করি। প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ পিস বিক্রি হয়। তৈরি করতে খরচ হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। বেশ লাভও হয়। প্রতি পিসের মূল্য ২ টাকা, দেখতেও ভালো, খেতে সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতারাও অনেক আগ্রহের সঙ্গে কেনেন। অনেকে বাড়িতে বাচ্চাদের জন্য নিয়ে যান।

দোকানটির অপর ক্রেতা জিয়াউর রহমান বলেন, অল্প দামে ভালো খাবার পাওয়া যাচ্ছে দোকানটিতে। শিঙাড়া-সমুচার সাইজটা আকারে ছোট হওয়ায় দেখতে একটু আকর্ষণীয়। একসঙ্গে যে কেউ ১৫ থেকে ২০টা খেতে পারবেন। সাতক্ষীরা শহরে এমন ব্যবসায়ী আর দ্বিতীয়টি নেই।

আকরামুল ইসলাম/এনএ