সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিদায় নিলেন শিক্ষক
বিদায় সব সময় বেদনার হলেও কখনো কখনো তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। এমনই এক বিদায়ী সংবর্ধনা পেয়েছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকরী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। এই শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বর্ণিল এই আয়োজন করে। বিভিন্ন ফুলের মালা দিয়ে সাজানো ঘোড়ার গাড়িতে করে ওই শিক্ষককে বিদায় জানান সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। দূর থেকে মনে হতে পারে কোনো রাজা-বাদশার বিয়ে। আসলে তা বিয়ে নয়, গর্বিত এক শিক্ষকের চাকরিজীবনের শেষ দিন ছিল এটি।
গত ১৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ছিল শফিকুল ইসলামের চাকরিজীবনের শেষ দিন। ওই দিন এভাবেই তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। বিদায়ী ওই শিক্ষক সদর উপজেলার চাদবিল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষক শফিকুল ইসলাম তার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু আমার দোয়া রেখে গেলাম। তোমরা লেখাপড়া করে যখন অনেক বড় হবে, তখন আমাদের কথা মনে পড়বে। তোমরা নিজেদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতালী বলেন, শফিকুল ইসলাম স্যার শুধু শিক্ষক ছিলেন না, তিনি পিতার মতো আমাদের স্নেহ করতেন। তার বিদায় আমাকে খুব মর্মাহত করছে। তিনি না থাকলেও তার দেওয়া শিক্ষা আমাদের মানবিক জীবন গড়তে সহায়ক হবে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্নি বলেন, সমাজ কল্যাণ বিভাগের শিক্ষক হলেও তিনি অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা দিতেন। তার শিক্ষা আমার সারা জীবনের মূলধন।
আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহাম্মদ আলী বলেন, বিদায়ী শিক্ষক শফিকুল শুধু একজন স্টাফ নন, তিনি আমার ভাইয়ের মতো ছিলেন। যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতাম। বিদায় বড় কষ্টের, তবুও মানতে হবে। আমাকেও এভাবে একদিন বিদায় নিতে হবে। একজন শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্মরণে রাখতেই এমন ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজন।
আমঝুপি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, একজন শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে অনেকেই জানে না। মানুষ গড়ার কারিগর একজন শিক্ষক। জাতিকে শিক্ষিত করতে শিক্ষকের গুরু দায়িত্ব রয়েছে। তিনি সে দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছেন। কারণ তার বিদায়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর চোখে অশ্রু ছিল। সহকর্মীদেরও প্রশংসার কমতি ছিল না।
মেহেরপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, একজন শিক্ষক যখন তার চাকরিজীবন শেষে বাড়ি ফিরে যান তখন তিনি অনেক কষ্ট পান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের রেখে চলে যাওয়া খুব কষ্টের। বিদায়ের কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্যই কর্তৃপক্ষ ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন করেছে। মেহেরপুরে এই পথম এমন উৎসবের বিদায়। শুধু শফিকুল ইসলাম নয়, প্রতিটি শিক্ষকের বিদায় এমন হওয়া উচিত।
আকতারুজ্জামান/আরআই