করোনার টিকা পরিবহনের জন্য ভাড়া বাবদ শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় সাত লাখ টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। কেউ লিখিত অভিযোগ না দিলেও স্থানীয়ভাবে সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন স্বপ্রণোদিত হয়ে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম।

তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা প্রদানে সার্বিক খরচ বহন করছে সরকার। সেখানে শিক্ষার্থী বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। স্থানীয়ভাবে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কিছু প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা আছে কি না, তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

সূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলায় শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য মাথাপিছু ৫০ টাকা করে ১৪ হাজার ৬৯৪ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে বরিশাল জেলা সদর থেকে টিকা পরিবহন বাবদ ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা খরচ হলেও বাকি ৭ লাখ টাকার হিসাব দিতে পারছেন না ওই কর্মকর্তা। উপজেলায় ১৫ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও বাকি ৫০৪ জনের কাছ থেকে টাকা তুলতে পারেননি বিভিন্ন কারণে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বেশ কয়েকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা সদর থেকে টিকা আনার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ টাকা করে আদায় শুরু করেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। ওই উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, টিকা পরিবহনের জন্য স্কুলপ্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এই টাকা অধিকাংশ স্কুলশিক্ষার্থীর কাছ থেকে তুলেছেন।

উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বরিশাল থেকে আগৈলঝাড়া উপজেলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ২ হাজার ২০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিকা আনার জন্য ১৩ দিনে ২ হাজার ২০০ টাকা হিসাবে ২৮ হাজার ৬০০ টাকা এবং আরও দুই দিন টিকা আনার ভাড়া বাবদ চালককে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার টাকা। টিকা সরবরাহের জন্য সাকল্যে খরচ হয়েছে ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, টিকা সরবরাহের সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করে সরকার। সেখানে টিকা পরিবহনে টাকা উত্তোলনের প্রশ্নই ওঠে না। শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনেছি। অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করি সঠিক সত্য বেরিয়ে আসবে।

আঞ্চলিক উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিকা দেওয়ার জন্য টাকা উত্তোলনের নিয়ম নেই। যদি কেউ এমন কাজ করে, তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আঞ্চলিক উপপরিচালকের করা তদন্ত কমিটির কোন আদেশ আমি এখনো পাইনি। পেলে তদন্ত করে দেখা হবে। তবে আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, তিনি নিজে টাকা তোলেননি। বিষয়টি আপনাকে (প্রতিবেদক) বুঝতে হবে, জেলা সদর থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স উপজেলায় যাবে, তার খরচ ব্যবস্থা করতে হয়। একেক উপজেলা একেকভাবে সেই খরচ তুলেছে। তবে সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিকা বাবদ কোনো টাকা উত্তোলনের নির্দেশনা নেই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, টিকা আগৈলঝাড়ায় এনে দেওয়ার জন্য পাঁচজন শিক্ষকনেতা মিলে বিভিন্ন স্কুল থেকে টাকা তুলেছেন। সেই টাকা জমা রেখেছিল শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক মন্টু বাবুর কাছে। আগামী রোববার টাকার হিসাব দেওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এমনভাবে উত্থাপন করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে টিনের বাক্সে একদিকে ৫০ টাকা ফেলেছেন, অপরদিকে টিকা নিয়েছেন। বিষয়টি তেমন নয়। শিক্ষকনেতারা টাকা উত্তোলন করে এখন আমার ওপর দায় দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সাত লাখ টাকা উত্তোলন হাস্যকর বিষয়। সম্ভবত ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা উত্তোলন হতে পারে। যে টাকা উত্তোলন হয়েছে, তার সব হিসাবও হয়তো শিক্ষকনেতাদের কাছে আছে। কিন্তু এর মধ্যে আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ