রংপুরে একদিনে আক্রান্ত ১৬৪, শনাক্তের হার ২৮.৯২
রংপুর বিভাগে এক দিনের ব্যবধানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। দিন দিন করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারতের কোলঘেঁষা এই বিভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে আরও ১৬৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত কোনো রোগীর মৃত্যুর হয়নি। শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশে।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) বিভাগে ৮৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সে দিন শনাক্তের হার ২০ শতাংশে ছিল। তারও আগে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) ৯৯ জন, মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) ৭২ জন, সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ৪৯ এবং রোববার (১৬ জানুয়ারি) করোনাভাইরাস সংক্রমিত ২৫ জন শনাক্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের আট জেলার ৫৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরের ৬৪, রংপুরের ৩১, নীলফামারীর ২৩, ঠাকুরগাঁওয়ের ১৮, পঞ্চগড়ের ১০, গাইবান্ধার ৮ জনসহ লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রাম জেলার ৫ জন করে করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে বিভাগে করোনা আক্রান্ত ২৯ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সংকটাপন্ন ৮ রোগীকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে। বাকিদের বাসায় রেখে চিকিৎসা চলছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে নতুন করে ৩৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে। একই সময়ে ভারত হতে লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৬ জন দেশে ফিরেছেন।
পরিচালক (স্বাস্থ্য) আরও জানান, রংপুর বিভাগে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুরে। এ জেলায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ১৫ হাজার ১৫৬ এবং ৩৩২ জন মারা গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বিভাগীয় জেলা রংপুরে। এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৪০- তে।
এ ছাড়া জেলা হিসেবে সবচেয়ে কম ৬৩ জন মারা গেছে গাইবান্ধায়। এ জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৯২১ জনের। ঠাকুরগাঁওয়ে মৃত্যু ২৫৬ ও শনাক্ত ৭ হাজার ৭৫৪, নীলফামারীতে মৃত্যু ৮৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৫২১, পঞ্চগড়ে মৃত্যু ৮১ ও শনাক্ত ৩ হাজার ৮৫৮, কুড়িগ্রামে মৃত্যু ৬৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৬৬৫ এবং লালমনিরহাট জেলায় মৃত্যু ৬৯ ও আক্রান্ত ২ হাজার ৭৯১ জন।
তিনি জানান, ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগে মোট ৩ লাখ ১১ হাজার ৯০৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ হাজার ৪০৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আট জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৫২ জনের। এখন পর্যন্ত বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ৫৪ হাজার ৪৬৪ জন।
এদিকে, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোনে থাকা রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলায় সংক্রমণে শনাক্তের হার ১০-১৫ শতাংশে ওঠা-নামা করছে। এ ছাড়া ইয়েলো জোন বা মধ্যম ঝুঁকিতে থাকা রংপুর, কুড়িগ্রাম ও ঠাকুরগাঁও জেলায় শনাক্তের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।
রংপুর বিভাগ করোনার সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নেই কোনো আতঙ্ক। পুরো বিভাগেই সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধের কোনো প্রভাব পড়েনি। এমনকি সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের কোনো তৎপরতাও নেই।
বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার কথা থাকলেও হাটবাজার, পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত সবখানেই তা উপেক্ষিত। সুরক্ষা নীতি বা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলছে সভা-সমাবেশ, উৎসবসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম চলছে দিব্যি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, গণটিকাসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে টিকার আওতায় আনার ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আগের চেয়ে কমে আসছে। তবে বর্তমানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এবং করোনার ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক।
একই সঙ্গে শীতকালে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সঙ্গে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই