দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার অন্যতম প্রবেশদার এখন কাজিরহাট-আরিচা নৌপথ। এই ফেরিঘাটে গত এক মাস ধরে প্রতিদিন ছয় শতাধিক যানবাহনের বাড়তি চাপের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রী ও চালকদের। পারাপারের জন্য ৭-১০ দিন অপেক্ষা করেও ফেরির দেখা মেলেনি ট্রাকচালকদের। তবে বর্তমানে ঘাটে যানজট নেই। অনায়াসে পার হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করে বলেন, প্রায় এক মাস ধরে ফেরি সংকটে পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত পরিবহনের বাড়তি চাপে ঘাটে আটকা পড়েছিল শতশত যানবাহন। একটি ফেরি চলাচল করায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াতে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে ফেরি সংকট দূর করে তারা। ফলে গত দুই সপ্তাহ আগে ঘাটে একটি ফেরি চলাচল করলেও এখন তিনটি ফেরি চলছে। এ কারণে যানবাহনের চাপ আর আগের মতো নেই।

সরেজমিনে শুক্রবার বিকেলে কাজিরহাট ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গাড়ির অপেক্ষায় ফেরিগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে পন্টুনে। যানবাহনের দীর্ঘ সাড়ি দেখা যায়নি। তাই বাড়ি বা কর্মস্থলে ফেরা মানুষ অনেকটা স্বস্তি নিয়েই নদী পার হচ্ছেন। তিনদিন আগেও যাত্রীদের ৫-৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিন্তু এখন চিত্র একদম পাল্টে গেছে। কাশিনাথপুর-কাজিরহাট সড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও ফেরি তিনটি হওয়ায় ট্রাকগুলোকে ঘাটে থামতে হচ্ছে না। তবে ঘাটে আরও দুটি ফেরি বাড়ানোর দাবি করেন ঘাটে আগত ট্রাকচালকরা।

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আগত ট্রাকচালক মোন্তাজ বিশ্বাস বলেন, গত সপ্তাহে এই রুটে ফেরি পারের জন্য ৫ দিন অপেক্ষা করেছি। এখন ঘাটে যানজট নেই। মাইক্রোবাস-ট্রাকগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। এই নৌপথে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।

কুষ্টিয়া থেকে আগত ট্রাকচালক হাশেম আলী জানান, এই ঘাট এখন এত জনপ্রিয় যে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ পণ্যবাহী ট্রাকই এখান দিয়ে পারাপার হচ্ছে। ট্রাক টার্মিনাল ও বাথরুম নির্মাণ করা জরুরি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও লাইটিংয়ের সুবিধাও বাড়ানো দরকার। এ ছাড়া আবাসিক হোটেল ও একটি নৌফাঁড়ি স্থাপন করা জরুরি।

কাজিরহাট ফেরিঘাটের টার্মিনাল সুপারিনটেন্ডেন্ট আবুল কাইয়ুম বলেন, বর্তমানে ৩টি ফেরি সচল থাকায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। সড়ক এলাকায়ও কোনো যানজট নেই। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই গাড়ি চালানো যাচ্ছে।

কাজিরহাট-আরিচা রুটে ছোট বড় মিলে মোট ৫টি ফেরি দেওয়া হলেও বর্তমানে ফেরি কদম, রাণিক্ষেত ও ফেরি কপোতি চালু রয়েছে। গেল কয়েকদিন যাত্রী ও যানবাহনের চাপ থাকলেও এখন ফাঁকা। 

আমিনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলম বলেন, গতকাল সকাল থেকে কাশিনাথপুর-কাজিরহাট মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কমে এসেছে। পরিবহনগুলো অনায়াসে পার হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের নিরাপত্তায় পুলিশি টহল অব্যাহত থাকবে। এখানে ডাকাতি বা মালামাল চুরি যাওয়ার কোনে ভয় নেই। কারণ সার্বক্ষণিক পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি পাবনার কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন,  ১টি ফেরি দিয়ে এই নৌপথ পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। যেভাবে কাজীরহাট ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে তাতে প্রতিদিন ফেরিগুলোর ২৪ থেকে ২৬টি ট্রিপের প্রয়োজন বলে কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তারা একটি ফেরি বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘাটে যানজট নেই। এই ঘাটে আরও তিনটি ফেরি দেওয়া হলে সব সময় যানজটমুক্ত থাকবে। 

তিনি আরও বলেন, পুলিশি নিরাপত্তায় একটি নৌ-ফাঁড়ি স্থাপন, ট্রাকচালকদের থাকার জন্য একটি আবাসিক হোটেল এবং টয়লেট নির্মাণসহ আরও দুইটি পন্টুন নির্মাণ করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

রাকিব হাসনাত/আরআই