তার পা দুটি সম্পূর্ণ অকেজো। তাই চলাচল করতে পারেন না। পেটের দা য়ে এ অবস্থায় ঘোড়ায় চড়ে ১৫ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন হাটবাজারসহ গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে জীবন চালিয়ে আসছেন।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের বাদে আঠারবাড়ি তুরুকপাড়া গ্রামে দেখা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব শারীরিক প্রতিবন্ধী রবিকুল ইসলামের সঙ্গে। এ সময় তিনি ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে এসেছিলেন।

জানতে চাইলে রবিকুল জানান, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তিনি আতকাপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। বৃদ্ধ পিতা, স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেসহ সাত সদস্যের পরিবার তার। সংসারে আর কোনো উপার্জনশীল ব্যক্তি না থাকায় পুরো সংসারের ভরণপোষণের কঠিন দায়িত্ব নিতে হয়েছে তাকে। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন ভিক্ষাবৃত্তিতে বের হতে হয়।

জমিজমা বলতে কিছুই নেই জানিয়ে রবিকুল বলেন, এত অভাব-অনটনের মধ্যেও মেয়েগুলোকে স্থানীয় একটা মাদরাসায় এবং ছেলেটাকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। খেয়ে না খেয়ে আমাদের সংসার চললেও সন্তানদের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্যই তাদের পড়াশোনা করাচ্ছি। কিন্তু তা কতটুকু পারব, সেটা জানি না।

কীভাবে পা দুটি অচল হলো, জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার বয়স যখন সাত বছর, তখন আমার টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল। তারপর থেকে আমার পা দুটি অকেজো হয়ে যায়। আমি হাঁটতে না পারায় মানুষ কোনো কাজ দেয় না। তাই জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে হাত পাততে শুরু করি।

সারাদিন ভিক্ষা করে কেমন আয় হয়, জানতে চাইলে বলেন, ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়ে তো আর এত বড় সংসার চলে না। তবু ১৫ বছর ধরে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করে কোনোরকম বেঁচে আছি।

আগে আমাদের নিজের একটা ঘোড়া ছিল। সেটায় চড়ে ভিক্ষা করতাম। বৃদ্ধ বাবা সে ঘোড়াটা দেখাশোনা করতেন। কিন্তু বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, তাই সে ঘোড়াটা বিক্রি করে দিয়েছি। এখন যে ঘোড়াটায় চড়ে ভিক্ষা করি, সেটা আমার না। এটা আমাদের পার্শ্ববর্তী কেন্দুয়া থানার মামুদপুর গ্রামের একজনের কাছ থেকে ধার নিয়েছি। কেন্দুয়ায় থেকেই কিছুদিন ধরে ভিক্ষা করছি। ঘোড়ার মালিক অবশ্য আমার কাছে টাকা চান না। তারপরও তো তাকে কিছু দিতে হবে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ভিক্ষা করতে আর ভালো লাগে না। লজ্জা লাগে। পা দুটি অকেজো থাকায় এবং অন্য কোনো কাজ করতে না পারায় বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছি। কিন্তু ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে দেখে মানুষ আমাকে নিয়ে উপহাস ও হাসি-ঠাট্টা করে। এতে আমার খুব কষ্ট লাগে।

ভিক্ষা ছাড়া অন্য কী করতে চান, জানতে চাইলে রবিকুল বলেন, টাকা থাকলে একটা অটোরিকশা (ইজিবাইক) কিনে চালাতাম। আর তা না হলে একটা মুদির দোকান দিয়ে ব্যবসা করতাম। কিন্তু আমার তো সেই সামর্থ্য নাই। সরকার কিংবা সমাজের কোনো বিত্তশালী ব্যক্তি যদি একটা অটোরিকশার (ইজিবাইক) ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে আর ভিক্ষা করতাম না।

এনএ