রংপুরে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের বিস্তার রোধে গণপরিবহনসহ অন্যান্য বাহনে সরকার ঘোষিত নতুন বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। সিট অনুযায়ী যাত্রী পরিবহনের কথা বলা হলেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। ঝুঁকি নিয়েই সাধারণ যাত্রীরা গা ঘেঁষাঘেষি করে ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহনসহ আন্তজেলা পরিবহনে যাতায়াত করছেন। প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় ঢাকাগামীসহ দূরপাল্লার পরিবহনগুলোতেও একই চিত্র বিরাজ করছে।  

বাসের বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই। সঙ্গে নেই করোনার টিকা সনদ। স্ট্যান্ডগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা নেই। বরং দুই সপ্তাহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার পর ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে গণপরিবহনে। এতে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত নির্দেশনা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন সচেতন মহল।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, মডার্ন মোড়, পার্কের মোড়, মাহিগঞ্জ সাতমাথা, মেডিকেল মোড় এলাকা ঘুরে আন্তজেলা পরিবহনে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।  

রংপুর নগরীর কামারপাড়া-ঢাকা স্ট্যান্ডে গিয়েও মানুষের ভিড় দেখা যায়। বাস শ্রমিকরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে এসব পরিবহনে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে না। চালক, শ্রমিক, যাত্রীদের সুরক্ষায় গাড়িতে নেই জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যাক্সিসল। আর বেশির ভাগ চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের মাস্কহীন দেখা গেছে।

অন্যদিকে যাত্রীরা নিজেদের সুরক্ষায় অসচেতনতার কথা স্বীকার করছেন। তাদের দাবি, স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণার পর মানুষের মধ্যে লকডাউনের চিন্তা-ভাবনা কাজ করছে। এ কারণে অনেকেই ঢাকা থেকে রংপুরমুখী হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ জরুরি কাজ সারতে ঢাকায় যাচ্ছেন। এতে পরিবহনে চাপ বেড়েছে। তবে সঙ্গে টিকার সনদ রাখা ও মাস্ক ব্যবহারে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে অনীহা রয়েছে।

কামারপাড়া-ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে আসা আবু মোনায়েমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কাউন্টারগুলোতে ভিড় আছে। কিন্তু টিকেট পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। মাস্ক মুখে দিয়ে গাড়িতে উঠতে বলা হয়েছে। কিন্তু টিকা সনদ আছে কিনা এটা কেউ দেখেনি। তবে আমাদের যাত্রী সাধারণের উচিত নিজ নিজ সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করা।  

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, যাত্রীদের চাপ রয়েছে। দূরপাল্লার পরিবহনগুলোতে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। সচেতন যাত্রীদের বেশির ভাগের সঙ্গে টিকার সনদও রয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতা বাড়লে সরকারি নির্দেশনা মেনে যাত্রীরাও পরিবহনে যাতায়াত করতে বাধ্য বলে দাবি তাদের।

ডিপজল পরিবহন কাউন্টারের সামনে কথা হলে কলারবয় (শ্রমিক) রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বলছি। কেউ মানছে, কেউ আবার গুরুত্ব দিচ্ছে না। আগের মতো মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে ভয়ভীতি না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে জানান এই পরিবহন শ্রমিক।

এদিকে দিন দিন ওমিক্রনের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও করোনার উদ্ভুত পরিস্থিতি ঠেকানো সম্ভব না হলে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনসহ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের দায়িত্ব নিয়ে সরকার ঘোষিত নির্দেশনা প্রতিপালনে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ তাদের ।

রংপুরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠিত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, সচেতনতার অভাব থেকেই মানুষজন এখনো পুরোপুরি টিকাগ্রহণ করেনি। বেশির ভাগ এখনো মুখে মাস্ক ব্যবহার করছে না। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীবাহী প্রতিটি পরিবহনে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত। এসব নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়া জরুরি। নয়তো সাধারণ মানুষদের দায়িত্বহীন কাণ্ডে বড় বিপর্যয় ঘটবে।

সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মলিহা খানম। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা আগের চেয়ে বেশি তৎপর এবং মাঠে রয়েছি। নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এখন সব বয়সী মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রীপরিষদের দেওয়া নির্দেশনার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। আমরা প্রয়োজনে জরিমানা করব, তবে আগে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছি। এরপরও যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, তাহলে আমাদের কঠোর অবস্থানে যেতেই হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই