গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর গ্রামে জমি দখলকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা করলে এক সদস্য আহত হয়। তবে হামলার ঘটনা পুলিশ মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করেনি।

শুক্রবার রাতে শ্রীপুরের মাওনা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর মোল্লা বাদী হয়ে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও নির্মাণাধীন ওয়ালেক্স টাইলস্ কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুর রহমান খান বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আরো একটি চাঁদাবাজীর মামলা দায়ের করেছেন। 

এখন পর্যন্ত এসব মামলায় অভিযুক্ত গাজীপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মহর আলীর ছেলে একিন আলী (৫২) ও তার স্ত্রী রোকেয়া আক্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া একিন আলীকে পুলিশ হেফাজতে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল সোহেল।

ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই একিন আলীর একটি জমি নিয়ে স্থানীয় ওয়ালেক্স নামক একটি নির্মাণাধীন কারখানার বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি কারখানা কর্তৃপক্ষ মাওনা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিস বৈঠক হলেও এতে সমাধান আসেনি। পরে হঠাৎ করেই কারখানা কর্তৃপক্ষ শুক্রবার বিকেলে মাওনা অস্থায়ী ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জাফর আলীর নেতৃত্বে জমির দখল নিতে আসে কারখানা কর্তৃপক্ষ। 

এসময় একিন আলী বাধা দিতে গেলে তাকে ও তার ছেলেকে ব্যাপক মারধর করে মাওনা ফাঁড়ির ইনচার্জ আবু জাফর আলী ও কারখানার কেয়ারটেকার মোজাম্মেল হক। মারধরের একপর্যায়ে রমজান ও একিন আলী গুরুতর জখম হয়। পরে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ হলে পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানার মুখে দায়ের কোপ লাগে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকেই আহতবস্থায় একিন আলী ও তার স্ত্রী রোকেয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে শুক্রবার রাতেই বিরোধপূর্ণ জমিতে নামফলক স্থাপন করে বালু দিয়ে জমি ভরাটের কাজ শুরু করে।

সংঘর্ষের পর পুলিশ সদস্যরা আশপাশের বসত বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে পুলিশ।

গাজীপুর গ্রামের রুকসানা আক্তার বলেন, তার বাড়ির পাশেই কারখানা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও একিন আলীর সংঘর্ষ হয়। এসময় আমার পরিবারের সবাই ঘরেই ছিল। পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার পর আশপাশের বাড়ি ঘরে এসেও হামলা চালিয়েছে পুলিশ। তার বাড়ির টিনের বেড়া ভাঙচুর শুরু করা হয়। এসময় তার দশম শ্রেণির ছেলে রাকিবকে পুলিশ ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে রড দিয়ে পেটায়। পরে শনিবার শুনি আমার কিশোর ছেলে রাকিব ও রফিকুল ইসলামকে কারখানা কর্তৃপক্ষ চাঁদাবাজীর মামলায় আসামি করেছে।
 
তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার তার ছেলে রাকিব স্কুল থেকে টিকা নিয়ে জ্বর আসায় বাড়িতে বিশ্রামে ছিল।

এ বিষয়ে শ্রীপুর পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবু জাফর মোল্লা বলেন, ভ্রাম্যমাণ ডিউটির মধ্যেই তারা সংবাদ পান দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এখানে বেশ কিছু লোক জড়ো হয়েছেন। পরে তারা ঘটনাস্থলে যান। এসময় কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই একিন আলী পুলিশের ওপর হামলা করলে একজন কনস্টেবল আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে পুলিশ জমি দখলের সঙ্গে জড়িত নয়। পুলিশের এজাহারে কেন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনার উল্লেখ নেই জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি তিনি।

শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, দুপক্ষের সংঘর্ষের সংবাদে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় একজন সদস্য আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে থানায় দুটি মামলা রুজু হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ালেক্স কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুর রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

শিহাব খান/এমএএস