একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের ঘুরঘুরিয়া গ্রামের শতাধিক শিশু। বিদ্যালয়ের অভাবে নিরক্ষরতা ও শিশু শ্রম বাড়ছে বলে মনে করেন অভিভাবকেরা। ফলে শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন তারা। এলাকাবাসীর দাবি, নতুন ঘুরঘুরিয়া এলাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্রাথমিক স্কুল স্থাপন করা দরকার।

জানা গেছে, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামে ‘নতুন ঘুরঘুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি প্রাথমিক স্কুল স্থাপন করা হয়। পরে বিদ্যালয়টি সরকারি না হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হওয়ার সময় এলাকার কিছু তরুণ সরকারীকরণের আশায় পূর্বের নামে বিদ্যালয়টি চালু করে। কিন্তু তৃতীয় ধাপেও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ না হওয়ায় পুনরায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। বর্তমানে সেখানে জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘর থাকলেও কোনো শিক্ষাকার্যক্রম চলে না।

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামে ২ শতাধিক পরিবারের বসবাস। পরিবারগুলোতে ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শতাধিক শিশু রয়েছে। এলাকার পশ্চিমে ৩ কিলোমিটার দূরে বন্যাতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পূর্ব দিক আড়াই কিলোমিটার দূরে ধর্মতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। আবার প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে সাধুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্কুলগুলোর দূরত্ব বশি হওয়ায় অনেক শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

আব্দুস ছামাদ, রবিউল, মনসুর শেখসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আমাদের ঘুরঘুরিয়া গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় অনেক শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া আমাদের গ্রাম থেকে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দূরত্ব অনেক বেশি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও খারাপ। ফলে অনেক অভিভাবকরা শিশুদের সেখানে যেতে দেয় না। তাই আমাদের গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুবই প্রয়োজন।

বন্ধ হয়ে যাওয়া নতুন ঘুরঘুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভুপদ্রনাথ মন্ডল বলেন, নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামে ৫-১০ বছর বয়সী শতাধিক শিশু রয়েছে। তাদর অনেকেই নিকটবর্তী স্কুল না থাকায় লেখাপড়া করে না। গ্রামটিতে সরকারি উদ্যোগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হতো।

বন্যাতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়র প্রধান শিক্ষক বাবর আলী জানান, আমার বিদ্যালয় থেকে নতুন ঘুরঘুরিয়া গ্রামটির দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি। গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় অভিভাকরা খুবই সমস্যায় রয়েছে। ওই গ্রামের বাচ্চাদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুবই প্রয়াজন।

জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কল্লোল কুমার বসু বলেন, ঘুরঘুরিয়া গ্রামটিতে ২ শতাধিক পরিবারের বাস। এবং ওই গ্রামে শতাধিক শিশু বাচ্চা রয়েছে। কিন্তু শিশুদের পড়ালেখার জন্য কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় তারা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা খুবই দুঃখ জনক। বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যালয়টি পুনরায় চালুর ব্যাপারে আমি জেলা শিক্ষা অফিসের সঙ্গে কথা বলব।

বালিয়াকান্দি উপজলা শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল হক বলেন, যে সব গ্রামে ২ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই সেখানে ‘বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১ হাজার নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্পে’র আওতায় বিদ্যালয় করা যেতে পারে। সরেজমিন পরিদর্শন করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযাদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিটি খাতেই উন্নয়ন অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে। বিদ্যালয় দূরে হওয়ায় কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে এটা দুঃখজনক। সরেজমিন পরিদর্শন করে শিক্ষা কমিটিতে রেজুলেশনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ প্রেরণ করা হবে।

রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, বালিয়াকান্দির জঙ্গল ইউনিয়নের ঘুরঘুরিয়া গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় বাচ্চারা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। সরেজমিন পরিদর্শন করে যদি এমন হয় তাহলে সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মীর সামসুজ্জামান/এমএসআর