ফরিদপুরে ভুল চিকিৎসা আর চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থামছেই না। এবার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার উৎপল নাগের বিরুদ্ধে হাসপাতালে বসে ক্লিনিকে রোগী পাঠিয়ে ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন রাজবাড়ী সদরের নিমতলা এলাকার বাসিন্দা মো. মান্নান ব্যাপারী (৪৪)। তিনি স্থানীয় একটি ইটভাটার শ্রমিক। 

লিখিত অভিযোগে মান্নান ব্যাপারি লেখেন, ‘আমার স্ত্রীর (হাসনা বেগম (৩৯)) পেটে ব্যথার কারণে গত ২২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটডোরে গাইনি বিভাগের এক চিকিৎসককে দেখাই। চিকিৎসক রোগীকে ওই হাসপাতালের সার্জারি চিকিৎসক উৎপল নাগের কাছে পাঠান। উৎপল নাগ আমার স্ত্রীকে দেখে বলেন, আপনার স্ত্রীকে দ্রুত অপারেশন না করালে বাঁচানো যাবে না। এই হাসপাতালে অপারেশন করতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তা ছাড়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাব্যবস্থা তেমন ভালো না। আপনার স্ত্রীকে বাঁচাতে হলে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত ফরিদপুর পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। আমি একটু পরেই সেখানে আসব।

তার কথামতো আমি স্ত্রীকে নিয়ে সেই হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে আমার স্ত্রীর তিনটি পরীক্ষা করা হয়। উৎপল নাগ সেখানে গিয়ে ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার সময় আমার স্ত্রীর এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করবেন বলে জানান। এরপর আমি বাড়িতে গিয়ে নগদ টাকা, কাঁথা, বালিশ নিয়ে ৬টার আগেই হাসপাতালে এসে দেখি আমার স্ত্রীর অপারেশন করা হয়ে গেছে। পরে অপারেশন বাবদ উৎপল আমার কাছ থেকে ২৬ হাজার টাকা নেন। ৪ দিন পর হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার সময় আমার স্ত্রীর সেলাই কেটে ড্রেসিং শুরু করেন। ঠিক তখনই নালি দিয়ে মল বেরোতে শুরু করে।

আমি বিষয়টি উৎপল নাগকে জানানোর পর তিনি বলেন, এই সমস্যার চিকিৎসা করতে আরও এক লাখ টাকা লাগবে। এরপর আমার স্ত্রীকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবার ভর্তি করে। আমার স্ত্রী এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অর্থলোভী চিকিৎসক উৎপল নাগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

এ অভিযোগের বিষয়ে উৎপল নাগ বলেন, ওই রোগীকে ফরিদপুরে আনার আগেই এপেন্ডিসাইটিস ফেটে যায়। ফলে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ায় দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, অস্ত্রোপচারে সমস্যার কারণে এমনটা হয়নি। মলবাহিত নালির সঙ্গে এপেন্ডিসাইটিস লেগে থাকলে এসব রোগীর ক্ষেত্রে নালিতে কিছু ছিদ্র তৈরি হয়। তবে এ ছিদ্র কিছুদিনের মধ্যেই জোড়া লেগে যায়। এই রোগী দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।

সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখে প্রাইভেট হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা কেন করলেন, জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, রোগীর পরিবারের তাড়া এবং রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় দ্রুততার জন্য প্রাইভেট হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক উৎপল নাগের বিরুদ্ধে এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।

জহির হোসেন/এনএ