রোহিঙ্গা শিবিরের বর্জ্য ও মলমূত্রের কারণে টেকনাফ উনছিপ্রাং রইক্যং বিশাল এলাকায় খাল ভরাট ও পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চার বছর ধরে অনাবাদি হয়ে পড়েছে কৃষিজমিগুলো। এতে স্থানীয় কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয়রা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।

উনছিপ্রাং থেকে রইক্যং পুটিবুনিয়া ক্যাম্পের পাশের চাকমা পাড়ার পূর্ব দিকে রোড-সংলগ্ন এলাকায় খালের যে অংশটুকু এখন পর্যন্ত উন্মুক্ত আছে, সেটুকুও আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। উনছিপ্রাং বড়খালের এই উন্মুক্ত অংশটুকু পড়েছে ২২ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আওতায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, উনছিপ্রাং ২২ নং ক্যাম্পের সঙ্গে লাগোয়া রইক্যং পুটিবুনিয়া খালজুড়ে মলমূত্র, প্লাস্টিকের বোতল, পচনশীল ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। মূলত রোহিঙ্গা শিবিরের ক্যাম্প এসব ময়লা-আবর্জনা ও মানববর্জ্য সরাসরি খালে ফেলা হয়।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, গত দুই বছরে কয়েক দফায় মৌখিক ও লিখিতভাবে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় আর্থিক সংকটে রয়েছেন কৃষকরা।

রইক্যং পুটিবুনিয়া এলাকার কৃষক রাজু মিয়া (৩৫) জানান, এই অঞ্চলের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। হালচাষে এই খালের পানি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু রোহিঙ্গা সম্প্রদায় আসার পর চার বছর ধরে এই খালে বর্জ্য ফেলার কারণে এটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। এ কারণে চাষ বন্ধ রয়েছে। একসময় এ খালের পানিতে চাষাবাদ করে পুরো বছরের সংসার চলত তার।

কৃষক আকতার উদ্দিন ভুলু বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে এই খালে জোয়ার-ভাটা বন্ধ। অথচ খাল থেকে আমরা মাছ ও কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। গেল চার বছরে এই খালের জোয়ার-ভাটা দূরের কথা, পানি দূষিত হয়ে উল্টো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এখন কৃষিকাজ বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে আমরা কষ্টে আছি। সংশ্লিষ্টদের জানানোর পরও কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুদ্দিন বলেন, রইক্যং পুটিবুনিয়ার সেতুর কাছ থেকে শুরু হয়ে এই খাল নাফ নদীর সঙ্গে মিলেছে। সেখানে রোহিঙ্গারা বর্জ্য পেলায় পানি দূষিত হয়ে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এতে খালটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখন খালের এই উন্মুক্ত অংশটুকুও যদি ভরাট হতে থাকে, তাহলে কৃষকদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, এই খালটিতে বর্জ্য না ফেলার জন্য ও পানিনিষ্কাশনের জন্য নানা জায়গায় আবেদন করেছি। দফায় দফায় কৃষকদের নিয়ে প্রশাসন, এনজিও কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে গিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত দ্রব্যে সাত-আটটি খাল দূষিত হয়ে উঠছে। এসব দূষিত পদার্থের কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। এ ছাড়া দূষিত দ্রব্যে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট, খালগুলো ভরাট হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক খালগুলো রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত খালের মধ্যে বর্জ্য নিক্ষেপ করছেন। ফলে খালের পানি যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনি খাল দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তিনি খালে রোহিঙ্গাদের বর্জ্য ফেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে খান খনন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত এ সংকট সমাধানে চেষ্টা করব। যদি আমরা পারি, তাহলে আমরা খালটি  খনন করব।

এনএ