কুমিল্লার সদর দক্ষিণে অভিযান চালিয়ে বিদেশে পাঠানোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে শাকিল মাহমুদ আজাদ ওরফে কাতারি জামাইকে (২৯) আটক করেছে র‌্যাব-১১। তিনি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার অশ্বদিয়া এলাকার আবু হানিফের ছেলে।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-২ কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হাসান। 

তিনি জানান, ২৫ জানুয়ারি রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে শাকিল মাহমুদ আজাদ ওরফে কাতারি জামাইকে আটক করা হয়। তিনি বিদেশে পাঠানোর নাম করে শ্বশুরবাড়ি এলাকা থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। বিয়েকে তিনি  প্রতারণার প্রধান অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন। প্রথমে স্বল্প পরিচিত কারও এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার বাহানায় দরিদ্র কিংবা অসচ্ছল পরিবারের মেয়েকে প্রবাসী পরিচয়ে বিয়ে করতেন। 

এরপর এলাকায় কাতার প্রবাসী জামাই হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করতেন। নানাভাবে ছোটখাটো দান-ছদকা করে এলাকার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতেন। এরপর নানা কৌশলে শ্বশুরবাড়ির এলাকার বেকার যুবকদের প্রবাসে চাকরি দেওয়ার টোপ দিতেন। তার ফাঁদে পা দিয়ে যেসব বিদেশ গমনেচ্ছু তার কাছে আসতেন, প্রথমেই তাদের কাছ থেকে ভিসা ও পাসপোর্ট বানানোর কথা বলে মোটা অংকের টাকা  নিয়ে নিতেন। এ সময় বিশ্বাস অর্জনের জন্য ভুক্তভোগীদের ফাঁকা চেকও দিতেন শাকিল মাহমুদ আজাদ। কিন্তু সেই চেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি থাকতো ফাঁকা। এমনকি টাকা নেওয়ার সময় অনেক ভুক্তভোগীর কাছে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করতেও দ্বিধাবোধ করতেন না তিনি। এরপর ভিসা ও পাসপোর্টের বিভিন্ন জটিলতার কথা বলে কিংবা সাময়িক হজের ভিসা দেওয়ার কথা বলে নানাভাবে কয়েক ধাপে টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, কোনো এলাকা থেকে মোটা অংকের টাকা হাতানো হয়ে গেলে স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি ফেলে রেখে ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম বন্ধ করে নিখোঁজ হয়ে যেতেন শাকিল মাহমুদ আজাদ। বিয়ে করার সময় আজাদ সেসব পরিবারের মেয়েদেরকেই টার্গেট করতেন, যাদের তার বিরুদ্ধে মামলা করার সামর্থ্য নেই। তিনি টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা এসে চাপ দিতেন তার শ্বশুর-শাশুড়ির ওপর। এক দিকে মেয়েকে ফেলে প্রতারক জামাইয়ের ফেরারি হওয়া, অপরদিকে এলাকার প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের চাপে দুর্বিসহ অবস্থায় পড়তেন আজাদের দরিদ্র শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক শাকিল মাহমুদ আজাদ জানান, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, নীলফামারী ও ফরিদপুরে অনেকটা একই রকমভাবে তিনি সাত বিয়ে করে কাতারি জামাই সেজে প্রতারণা করে পালিয়েছেন। প্রতারক আজাদ চতুর্থ প্রতারণামূলক বিয়েটি করেন খুলনায়। সেখানকার কয়েকজনকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। এ সময় এলাকাবাসীর রোষানলে পড়েন আজাদের চতুর্থ স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। অনেকটা বাধ্য হয়েই নারী নির্যাতন দমন আইনে আজাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তারা। ভোক্তভোগীরা আজাদের শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে মামলা করলে তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। 

পরে শাকিল মাহমুদ আজাদের আসল বাড়ি কুমিল্লার বরুড়ায় বলে জানতে পেরে গত ১৫ দিন আগে কুমিল্লায় আসেন আজাদের চতুর্থ স্ত্রী।  এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে আজাদকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে বরুড়া থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। 

অমিত মজুমদার/আরএআর