কাউনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

রংপুরের কাউনিয়ায় টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে দশ বছর বয়সী দুই শিশুকে গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজিব মোল্লাটারি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে ৯৯৯- এ খবর পেয়ে নির্যাতনের শিকার দুই শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয় পুলিশ। তবে ইউপি সদস্যের লোকজনের হুমকিতে চিকিৎসা নিতে না পারার অভিযোগ করছে এক শিশুর পরিবার।

নির্যাতনের শিকার শিশু শামীম রাজিব মোল্লাটারী গ্রামের সামসুল হকের ছেলে ও রাসেল ৮ চৈতারামোড় বাজেমজকুর গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে। পরিবারের লোকজন নির্যাতনের শিকার শামীমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সেখান থেকে ইউনুস মেম্বারের লোকজন তাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন শামীমের মামা রাজু মিয়া। বর্তমানে শামীম বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে আছে। নির্যাতনের শিকার আরেক শিশু রাসেলকে সন্ধ্যায় কাউনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

শামীমের মা সোহাগী বেগম জানান, সংসারে অভাবের কারণে শিশু শামীম একটি পিকআপে সহকারী হিসেবে কাজ করে। চারদিন পর গত মঙ্গলবার রাতে নওগাঁ থেকে বাড়ি ফিরে খাওয়া শেষে গাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে লোকমুখে জানতে পারেন যে, গ্রামের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউনুস আলী বাড়িতে তার ছেলের হাত-পা বেঁধে পেটাচ্ছে।

পরে তিনি জানতে পারেন যে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ওই এলাকার আকরাম হোসেন নামে এক ব্যক্তির ঘরের সিঁধ কেটে ৭০ হাজার টাকা কে বা কারা চুরি করেছে। এ ঘটনায় আকরাম এবং তার ভাই ইয়াকুব ও ইউপি সদস্য ইউনুস আলী তার ছেলেকে সন্দেহ করে অমানবিক নির্যাতন চালায়।

এই ঘটনার খবর পেয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশ ওই বাড়ি থেকে শামীম ও রাসেলকে উদ্ধার করে। পরে বিকেলে শামীমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করতে গেলে ইউনুস মেম্বারের লোকজন তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

সোহাগী বেগম আরও জানান, তার স্বামী কাজের খোঁজে কুমিল্লা গেছেন। এদিকে তার ছেলে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে কাতরাচ্ছে। তার নিরপরাধ ছেলেকে যারা এভাবে নির্যাতন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

নির্যাতনের শিকার শিশু শামীম জানায়, ইউনুস মেম্বারের কথা মতে প্রতিবেশী দুইজন মেম্বারের বাড়িতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে হাত-পা বেঁধে গাছের ডাল দিয়ে মারপিট করে। মেম্বারের পা ধরে বলেছিলাম আমি টাকা চুরি করিনি। আমার কোনো কথাই শুনেনি। কোমর থেকে পায়ের গিরা পর্যন্ত গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়েছে।

নির্যাতনের শিকার আরেক শিশু রাসেলের বাবা মন্তাজ আলী জানান, বুধবার সকালে তিনি কাজে বেরিয়ে যান। বিকেলে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন যে, সকালে দুটি মোটরসাইকেলে করে ৪-৫ জন লোক এসে তার ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ইউনুস মেম্বারের বাড়িতে আটকে রেখে মারধর করেছে। পরে পুলিশের সহায়তায় বাড়ি ফিরে আসে শিশু রাসেল।

তিনি জানান, তার ছোট শিশুকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছে যে এখন সে হাঁটতে পারছে না। কেউ কথা বলতে গেলে কোনো কথা বলছে না, লোকজন দেখলেই সে আঁতকে উঠছে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমার ছেলেটা নাকি অনেক কান্নাকাটি করেছে। মেম্বার সাহেব তবুও তাকে ছেড়ে দেয়নি। পানি খাইতে চেয়েছিল, সেটাও খেতে দেয়নি।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওমর ফারুক জানান, শিশু রাসেলের দুই উরুতে চারটা সুচ ফোটানো হয়েছে। বাম হাঁটুর নিচেও ফোলা আছে। এছাড়া ডান পায়ের পাতায় রক্ত জমাট হয়েছে।  এক্স-রে করার পর আঘাতের চিহ্ন আরো ভালো করে দেখা যাবে। 

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ইউনুস আলী বলেন, আমি মারধর করিনি। আকরাম ও ইয়াকুবের বাড়িতে মারধর করা হয়েছে। মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আকরাম হোসেন বলেন, প্রথমে শামীমকে নিয়ে আসা হয়। পরে তার কথা মতো রাসেলকে আনা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, মেম্বার শিশু দুইজনকে চর-থাপ্পড় মেরেছেন। এর বেশি কিছু ঘটেনি।

কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুমুর রহমান বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে টেপামধুপুর ইউনিয়নের সদস্য ইউনুস আলীর বাড়ি থেকে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়। এদের মধ্যে একজন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং অপরজন বাড়িতে রয়েছে বলে শুনেছি। যেহেতু ৯৯৯ এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে শিশু দুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে, এ কারণে থানায় একটি জিডি দায়ের করা হবে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর