মুজিব শতবর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন। এখন তারা পাকা ঘরে থাকছেন। তবে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাষকাউলিয়া ইউনিয়নের জোতপাড়া চৌদ্দরশি গ্রামের হতদরিদ্র রুহুল আমিন (৭০) ও ছালমা বেগম (৪৫) দম্পতির ভাগ্যে জোটেনি কোনো ঘর। জরাজীর্ণ একটি টিনের ছাপরা ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রুহুল আমিনের প্রথম স্ত্রীর ঘরের চার ছেলে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারপরও ভাঙা একটি টিনের ছাপরা ঘরে দ্বিতীয় স্ত্রীকে মানবেতর জীবন কাটছে তার। রুহুল আমিনের চার শতক জমিতে বসতভিটা ছিল। সেটাও যমুনা নদীতে ভেঙে গেছে বহু আগে। অসহায় এই দম্পতি আজ বয়স ও অভাবের ভারে একেবারে নুয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুহুল আমিনের জায়গা জমি যা ছিল সব শেষ। বসতভিটাও যমুনা নদীতে ভেঙে গেছে বহু আগে। এখন জোতপাড়া বাজারের এক ব্যাবসায়ী মোহাম্মদ আলী জিন্নার বসতভিটায় কোনো রকম ছয় টিনের ছাপড়া ঘর করে থাকছেন এ দম্পতি। কনকনে শীত আর ঠান্ডা বাতাসে ভাঙা টিনের ছাপরায় মানবেতর জীবনযাপন কাটছে তাদের। এই শীতে সরকারিভাবে কেউ তাদের পাশে না দাঁড়ালেও খাষকাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ছাইদ বিদ্যুৎ একটি কম্বল তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।

রুহুল আমিনের পাঁচ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে হালিম পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করে কোনো রকমে তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সংসার চালান। ছোট ছেলে ঢাকায় থাকেন। এক মেয়ে ছোট। বর্তমানে রুহুল আমিন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সরকারের দেওয়া বয়স্কভাতার টাকায় কোনোরকমে সংসার চালান।

অসহায় রুহুল আমিন বলেন, পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও তারা তেমন একটা খোঁজখবর রাখে না। পাঁচ ছেলেও এখন বিয়ে করে আলাদা সংসার গড়েছে। তাদের সংসারেও অভাব অনটন। আমাদের রেখে তারা এখন আলাদা। 

তিনি বলেন, ভোটের সময় ভোট চাইতে আসে মেম্বার-চেয়ারম্যানরা। ভোট হয়ে গেলে কেউ আর খোঁজ রাখে না। একটি ঘরের জন্য সাবেক চেয়ারম্যানকে বহুবার বলেছি। তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। আমাদের চেয়ে যাদের খুব ভালো চলে তারা সরকারি ঘর পায়, অথচ আমাদের ভাগ্যে জোটেনি।

স্থানীয়রা জানান, অসহায় এই দম্পতি খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করছেন। থাকেন ছোট্ট একটি টিনের ছাপরা ঘরে। সরকারের পক্ষ থেকে এই দম্পতির একটি সরকারি ঘর পাওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তারা।

খাষকাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুর রহমান শহীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার সঙ্গে রুহুল আমিন ঘরের বিষয়ে কখনো কোনো কথা বলেননি। তবে ওই রুহুল আমিন অনেক আগেই একটি সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য ছিল। আমি তাদের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখব।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ওই দম্পতিও আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানাননি। যেহেতু জানতে পারলাম তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তাই সরেজমিন তদন্ত করে তাদের জন্য সরকারি ঘর বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর