বরগুনায় গোলগাছের রস থেকে গুড় তৈরির ধুম
কেউ হাড়িভর্তি রস নিয়ে ফিরছেন, কেউবা রস থেকে গুড় প্রস্তুত করছেন। আবার কেউ কেউ সে গুড় বাজারজাত করছেন। এভাবেই প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের কর্মযজ্ঞ। বলছিলাম বরগুনার তালতলী উপজেলার গোলের রস সংগ্রহকারী গাছিদের ব্যস্ততার কথা।
জানা গেছে, সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে গোলগাছগুলো। তবে শীত এলেই কদর বাড়ে এসব গাছের। শীতের শুরু থেকে উপকূলীয় তালতলীর গাছিরা গোলের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসব রস দিয়ে তৈরি হয় গুড়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পৌঁছে যায় সারাদেশে।
বিজ্ঞাপন
তালতলীর কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, খাল ও ফসলের মাঠে প্রচুর পরিমাণে গোল গাছ রয়েছে। মূলত গোল গাছের ফল থেকে রস পাওয়া যায়। গাছিরা প্রথমে বোটা থেকে ফল কেটে আলাদা করেন। এরপর বোটার কাটা অংশে হাড়ি, কলসি ও বোতল ঝুলিয়ে দেয়। বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত এসব হাড়ি-কলসি বোটার সঙ্গে পেতে রাখা হয়। ভোরে রস সংগ্রহ করেন গাছিরা। এরপর এসব রস বড় বড় পাত্রে জ্বাল করে গুড় তৈরি করা হয়। এরপর এই গুড় বাজারজাত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
তালতলী বেহালা গ্রামের গাছি নিরঞ্জন মজুমদার বলেন, আমি গত বছর ১৮০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেছি। কিন্তু এ বছর ফলন কম হওয়ায় মাত্র ৫০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে পারছি। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। সরকারের কাছে আবেদন যাতে আমাদের খালগুলো খনন করে দেওয়া হয়। যাতে গোল গাছগুলো পর্যাপ্ত পানি পেতে পারে।
উপজেলার গেন্ডামারা গ্রামের গাছি নিশীকান্ত শীল বলেন, আমি প্রতি বছর ৪০০ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন কম। তাই ২১০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। এক কলসি রস সংগ্রহ করতে ২৫টি গোল গাছের ফল কাটতে হয়। এক কলসি রস থেকে ৩ কেজি গুড় পাই।
ক্রেতা আরিফ রহমান বলেন, আমি বরগুনা থেকে গুড় নিতে এসেছি। কয়েক বছর ধরে আমি এখান থেকে গুড় সংগ্রহ করি। তবে এ বছর উৎপাদন কম হওয়ায় দাম একটু বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, গোল গাছের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। গাছিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিজ্ঞ করে তোলার পাশাপাশি এই গুড় প্যাকেটজাত করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বাণিজ্যিকভাবে পাঠানোর বিষয়ে সুপারিশ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, তালতলী উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে গোল গাছ রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। সব চেয়ে বেশি গুড় আসে বেহালা ও গেন্ডামারা গ্রাম থেকে। এক মৌসুমে প্রায় ১৪ হাজার টন গুড় উৎপাদিত হয়। এ উপজেলায় প্রায় ১৫০ জন গাছি্এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
এসপি