বাসচালক গণজের আলী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দুটি পা হারান। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসা করতে হলে ১ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু হতদরিদ্র গণজেরের পরিবার সমাজের বিত্তশালীদের সহায়তা ছাড়া কোনো উপায় দেখছে না।

মো. গণজের আলী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের কোলা গ্রামের মৃত আইজদ্দীন মন্ডল ছোট ছেলে। গণজের আলীর এক ছেলে হুদয় মন্ডল (১৬) হলিধানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত এবং মেয়ে বৈশাখী আক্তার দিয়া (৭) কোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গণজের পেশায় একজন বাসচালক ছিলেন। ঝিনাইদহ-যশোর মহাড়কে গড়াই পরিবহনের গাড়ি চালাতেন তিনি। ২০১৯ সালে যাত্রীবোঝাই বাস নিয়ে ঝিনাইদহ থেকে যশোরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় বারবাজার এলাকায় ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তার দুটি পা-ই বিকল হয়ে পড়ে। প্রথমে পা-দুটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, পরে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসার মাধ্যমে দুটি পা রাখা হলেও হাঁটাচলা করতে পারেন না তিনি। পারিবারিকভাবে অসচ্ছল হওয়ার কারণে ভালো কোথাও চিকিৎসা করাতে পারেননি।

গ্রামের বিত্তশালী, আত্মীয়স্বজন ও মায়ের নামে ৫ শতক জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করানোর পর ডান পায়ে সামান্য বল প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু বাঁ পায়ের চিকিৎসা করাবেন, তেমন সামর্থ্য নেই। অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে শ্রমিকের কাজ করে কোনো রকম অভাবের সংসার চলান। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১ লাখ টাকা লাগবে। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা ছাড়া তার পরিবার অহসায়।

প্রতিবেশী মো. তৌফিক হোসেন জানান, গণজের আলী গড়াই গাড়ির চালক ছিলেন। যশোর যাওয়ার সময় ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রী বাঁচাতে গিয়ে নিজেই এখন পা ভেঙে বাড়িতে পড়ে আছেন। তাকে দেখার মতো কেউ নেই। গ্রামের লোকজন মিলে বাড়িতে একটি দোকান করে দিলেও তেমন কোনো বেচাকেনা হয় না। এখন তিনি খুবই অসহায় জীবন যাপন করছেন। সবাই যদি এই অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়, তাহালে হয়তো সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।

গণজের আলীর স্ত্রী রোজিনা খাতুন জানান, তিন বছর ধরে তার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় বিছানায় পড়ে আছেন। স্বামী ছাড়া সংসারের আয়-রোজগারের আর কেউ নেই। এক ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। ছেলেকে দিয়ে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। ফলে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এখন স্বামীকে চিকিৎসা করানোর তেমন কোনো অর্থ নেই। সরকার বা সমাজের বিত্তশালীদের সহায়তা চান তিনি।

ভাই ওয়াজেদ মন্ডল জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে ঝিনাইদহ শ্রমিক ইউনিয়ন, আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের অনেক মানুষ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে। মায়ের একটু জমি ছিল, তা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের লোকজন মিলে একটা দোকান করে দিয়েছে, এখন তোমন কোনো বেচাকেনা হয় না। আজ তিন বছর ধরেই সে ঘরে পড়ে আছে। ডাক্তার বলেছে চিকিৎসা করাতে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা খরচ হবে। কোনো স্বহৃদয়বান ব্যক্তি যদি ওর পাশে দাঁড়ায়, তাহলে হয়তো ছেলেমেয়ে নিয়ে আবার আগের জীবনে ফিরে যেতে পারবে।

গণজের আলী জানান, দুর্ঘটনার পর অনেকের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ করে নিজের চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন তার সংসারও চলে না। ছোট একটা ছেলে মানুষের ক্ষেতে কাজ করে যা আনে, তাই দিয়েই কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে থাকতে হয়। এখন যদি চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, তাহলে পরিশ্রম করে বাকি জীবন চলতে পারবেন।

ঝিনাইদহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আব্দুল লতিফ সেখ বলেন, গণজের আলী গরিব হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার পর পরিবার থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সমাজসেবা কার্যলয় থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য খরচ দেওয়া হয়েছিল, যেটা তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তার চিকিৎসা আরও দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল।

তবে তিনি যদি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, তাহলে হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যক্রমের অধীনে তাকে সর্বোচ্চ আর্থিক ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

এনএ