আব্দুল হান্নান

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় সাড়ে চার লাখ টাকার বিনিময়ে এক ইউপি সদস্য প্রার্থীকে ভোটে জেতানোর গোপন চুক্তির অডিও ফাঁসের ঘটনায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেখানে পীরগাছা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শোয়েব সিদ্দিকীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

এছাড়াও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মিঠাপুকুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল করিম।

বৃহস্পতিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রংপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন।

ভোটে জেতাতে গোপন পরিকল্পনার অডিও ক্লিপটি বুধবার রাতে ফাঁস হলে তা ফেসবুক ও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভোটগ্রহণের পাঁচ দিন আগে প্রার্থী ও নির্বাচন কর্মকর্তার এমন গোপন চুক্তির অডিও ক্লিপ ঘিরে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে।

সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, কিছু দিন আগে টাকা চাওয়ার একটি অডিও ক্লিপ পাওয়ার পর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান ও মিঠাপুকুর উপজেলা সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেন। কমিশন অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের দুজনকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হবে। ইউটিউব ও ফেসবুকে পাওয়া অডিও ক্লিপ অনুযায়ী, মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান উপজেলার বালারহাট ইউপির সদস্য প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলামকে টাকা দিলে তাকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন। তার বিনিময়ে তার কাছে সাড়ে চার লাখ টাকা দাবি করেন। 

এছাড়া উপজেলা সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী বিরুদ্ধে ৮ প্রার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়। তাকেও প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন। যদিও গোলাম রব্বানী তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। 

এদিকে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের কথোপকথনে শোনা যায়, রফিকুল ইসলাম নামের ইউপি সদস্য পদপ্রার্থীকে জেতাতে ভোটকেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষের লোকজনকে বের করে দেওয়া এবং ভোটের আগেই অন্তত ৩শ ব্যালট পেপার সরবরাহের বিনিময়ে টাকা চেয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তা।

এ সময় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই ইউপি সদস্য প্রার্থীকে বোঝান, যেহেতু নির্বাচন করতে গেলে প্রতিদিনই ১০ হাজার করে টাকা ব্যয় হবে, তাতে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। তাতে নির্বাচিত হওয়ার কোনো গ্যারান্টিও নেই। তাই সেটি না করে, তার সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তি করলে তিনি যেভাবেই হোক জিতিয়ে দেবেন। এক্ষেত্রে তিনি গ্যারান্টি হিসেবে জেতাতে না পারলে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

শুধু তাই নয়, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে জিতিয়ে দেওয়ার কথা জানান নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান।

এ ব্যাপারে বালারহাট ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ফুটবল প্রতীকের সদস্য পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী দুই দফায় নির্বাচন কর্মকর্তাকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়েছি। 

প্রসঙ্গত, সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর