ভোলার দৌলতখান উপজেলায় ২০০ বছরের পুরোনো ‘স্বপ্নে দেখা দেবীর’ মন্দিরে পূজাকে কেন্দ্র করে হাজারো দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে। বসেছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা। শনিবার (০৫ জানুয়ারি) উপজেলার চরপাতা ইউনিয়ের সৃষ্টিতলার ওই মন্দিরে দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দেবীর আরোধনা করতে দেখা গেছে। 

জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর আগে ওই এলাকার যোগেন্দ্র সিং বাড়ির পূর্ব পুরুষের স্বপ্নে পাওয়া ‘বুড়ি মা’ বৃক্ষের অবস্থান। তিনি স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন, কেউ যদি মনের বাসনা নিয়ে এই বৃক্ষের নিচে এসে প্রার্থনা করেন, তাহলে তার সেই বাসনা পূরণ হয়। স্বপ্নে দেখার পর সিং বাড়ির সেই পুরুষ এখানে একটি বৃক্ষ (রেইনট্রি গাছ) রোপণ করেন। সেই থেকে হাজার হাজার পুন্যার্থী বছরের এই দিনটি এলেই মনের বাসনা পূরণ করতে আরোধনা করেন, পূজায় অংশগ্রহণ করেন। বিশাল এলাকা নিয়ে অবস্থিত এই সৃষ্টিতলা মন্দির জেলার বাইরেও বেশ পরিচিত। গাছটি এখনও ঐতিহ্য বহন করে আছে।

স্থানীয়রা জানান, সৃষ্টিতলায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও মাঘ মাসের পঞ্চম তিথিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সরস্বতী পূজা। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বপ্নে দেখা দেবী বা বুড়ি মায়ের পূজা। এই পূজায় ধুপকাঠি, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে প্রার্থনা করেন আগত ভক্তরা। এছাড়াও শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির, শ্মশান কালি মাতার মন্দির, বুড়ি মায়ের মন্দির প্রাঙ্গণে প্রচীনতম এ উৎসব পালিত হয়।  
সকাল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দিনব্যাপী চলে এ অনুষ্ঠান। বুড়ি মায়ের পূজা উৎসবে কেউ আসেন রোগমুক্তির প্রার্থনা নিয়ে, কেউবা আসেন পারিবারিক বা সামাজিক উন্নতির প্রার্থনা নিয়ে। বুড়ি মায়ের বৃক্ষকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে মায়ের মন্দির, শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির, শ্রী শ্রী কালি মায়ের মন্দির, শ্রী শ্রী সরস্বতী মন্দির, শ্রী শ্রী মনসা মন্দির। বুড়ি মায়ের পুজোর দিন সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি দেওয়া হয়, এক পাশে বসে গ্রামীণ মেলা, অন্যপাশে কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আগত দর্শনার্থীদের আগমনে মন্দির প্রাঙ্গণ মিলনমেলায় পরিণত হয়। 

করোনার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে মন্দিরে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে নজরদারি করেছে আয়োজক কমিটি। পুন্যার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ৫০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করেছে বলে জানায় আয়োজক কমিটি।

ইলিশা ইউনিয়ন থেকে মন্দিরে আশা বৃদ্ধা চামেলি রানী বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এখানে বুড়ি মায়ের পূজা হচ্ছে। মনের বাসনা পূরণ করতে ভক্তরা মন্দিরে ছুটে আসেন। 

মন্দিরে আসা কল্পনা রানী বলেন, আমি তজুমদ্দিন থেকে এসেছি। মায়ের কাছে চেয়েছি, আশা করি মনের আশা পূরণ হবে। 

স্থানীয় বাসিন্দা পুন্যার্থী বিউটি রানী বলেন, আমি প্রতি বছরই এখানে আসি।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং মন্দির কমিটির উপদেষ্টা দিলীপ মন্ডল জানান, প্রতি বছর মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে বুড়ি মায়ের পুজো হয়। ভোলা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার পুন্যার্থী তাদের বিভিন্ন মানত নিয়ে আসেন। তাদের বিশ্বাস বুড়ি মা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফল দেবেন। এখানে এসে কেউ খালি হাতে ফিরে যায় না। তাই এখানে হাজারো ভক্তের সমাগম হয়। 

মন্দির কমিটির সভাপতি সমরজিৎ সিং এবং সাধারণ সম্পাদক অন্তর হাওলাদার বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে বুড়ি মায়ের পূজা করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনসহ সবার আন্তরিকতায় সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানটি হয়েছে। পুন্যার্থীরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সেদিকে আমাদের বাড়তি নজরদারি ছিল। 

এ ব্যাপারে দৌলতখান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলার রহমান জানান, সৃষ্টিতলায় হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুন্যার্থীদের নিরাপত্তা এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশের পক্ষে  প্রচারণা চালানো হয়। 

ইমতিয়াজুর রহমান/আরএআর