মা-বাবা, তিন ভাই ও তিন বোনের সংসার ভেদরগঞ্জের কৃষক আনোয়ার মিয়ার। করোনার কারণে ঢাকা থেকে দেশে এসে কৃষিকাজে যুক্ত হন। চাচার কাছ থেকে বাড়ির পাশের জমি ইজারা নিয়ে লাউয়ের চাষ শুরু করেন। সম্প্রতি লাউগাছে ধরেছে ফুল। কিন্তু রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা কেটে ফেলে সব লাউগাছ।

সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে খেতের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনোয়ার মিয়া ও তার বাবা এমদাদ মোল্লা। খেতে গিয়ে দেখতে পান তাদের লাউয়ের চারার প্রতিটি গোড়া কারা যেন কেটে রেখে গেছেন। ভেদরগঞ্জ উপজেলার চর কুমারিয়া ইউনিয়নের নাওডোবা গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার ঢাকা থেকে দেশে আসার পর বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করেন। তার হাতে ভালো সবজি ফলে। এবার তিনি লাউয়ের চারা লাগান। গাছে প্রচুর পরিমাণ লাউয়ের ফুল আসে। তিনি আসা করেছিলেন বর্তমান বাজার মূল্য লাখ টাকা আয় করতে পারতেন। কিন্তু সোমবার রাতে কে বা কারা তার লাউগাছ কেটে ফেলে।

আনোয়ার মিয়া বলেন, আমি ঢাকা থাকতাম। করোনার কারণে চাকরি চলে যায়। তাই দেশে চলে আসি। নিজেদের জায়গা-জমি নেই। কিন্তু চাচার থেকে কয়েক শতাংশ জমি লিজ নিয়ে কাজ করা শুরু করি। আমি পেঁয়াজ, শসা, টমেটো, লাউ, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করি। ফলন ভালো হইছিল। এবার ১০ শতাংশ জমিতে শতাধিক লাউের চারা রোপণ করি। প্রতিটি ডগায় লাউয়ের করা ছেড়েছে। আমার সঙ্গে কারও কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু হঠাৎ গত রাতে আমার জমির লাউয়ের প্রতিটি গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আমার সংসার চলে এই ফসলের ওপর।

থানায় অভিযোগ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাতে ঘটনা ঘটেছে। কাউকে দেখিনি। কার নামে অভিযোগ করব? তবে আল্লাহ দরবারে অভিযোগ দিয়েছি। যে আমার ক্ষতি করেছে, আল্লাহ তার ভালো করুক।

স্থানীয় আরমান হোসেন বলেন, তার গাছের দিকে তাকালে কান্না চলে আসে। এটা কোনো স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে না। যে এই কাজটা করেছে, সে একটা অস্বাভাবিক মানুষ। তারা চায় না আসলে মানুষ একটু ভালো থাকুক। তার পরিবার নিয়ে ভালো থাকুক। প্রতিটি গাছে শতাধিকের ওপরে লাউয়ের ফুল রয়েছে। এটা আসলেই একটি অমানবিক কাজ।

আনোয়ার মিয়ার বাবা এমদাদুল মোল্লা বলেন, আমি অসুস্থ। আমার ছেলের চাষবাসের ওপর দিয়ে ওষুধ ও খাওয়া চলে আমাদের। এখন আমাদের কী হবে? কে দেখবে আমাদের? কে খাওয়াবে আমাদের? লাউয়ের কয়েক হাজার করা ছিল গাছে। গতকাল প্রথম দশটা লাউ বিক্রি করেছিলাম। কীভাবে চলবে সংসার বুজতাছি না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ