চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের সগীর শাহ কাটা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী সুরেশ চন্দ্র পরলোক গমন করেন মাত্র ১০ দিন আগে। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে মাথা মোড়ানোর জন্য যান তার সন্তানরা। এই কর্ম পালনের জন্য তার নয় সন্তান মহাসড়কের পূর্ব পাশের বনে গিয়েছিলেন। মহাসড়কের পাশেই কর্ম শেষে বাড়ি ফেরার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তারা। মাথা মোড়ানো শেষে বাবার শ্মশানে প্রার্থণা করতে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু তা আর হলো না, উল্টো নিজেরাই লাশ হয়ে শ্মশানে যাচ্ছেন তারা। 

১০ দিন আগে, বাবা সুরোজ সুশীল মারা গেলে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বানানো হয়েছিলো প্যান্ডেলটি। এখন যেখানে ঠাঁই হয়েছে তারই পাঁচ সন্তানের মৃতদেহ।

ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মঙ্গলবার ভোরে শ্রাদ্ধ শেষে মালুমঘাঁটের হাসিনা পাড়া এলাকায় রাস্তার পার হচ্ছিলেন পরিবারের নয়জন। এই সময় কক্সবাজারমুখী পিকআপ ভ্যান দ্রুতবেগে এসে তাদের চাপা দেয়। এতে মারা যান চার ভাই-নিরুপম সুশীল, অনুপম সুশীল, দীপক সুশীল ও চম্পক সুশীল।

আহত অবস্থায় মালুমঘাঁট ও চট্টগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি হন চারজন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক ভাই স্মরণ সুশীল। আগের শোক কাটতে না কাটতেই পরিবারের উপার্জনক্ষম পাঁচ সদস্যের এমন মৃত্যুতে হতবিহ্বল স্বজনেরা।

প্রত্যক্ষদর্শী প্লাবন ঘটনার পর থেকে পাগলপ্রায়। তিনি এবার ডুলাহাজারা কলেজ এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। চার-পাঁচজন স্বজন ও বন্ধু তাকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি অপরিচিত যাকে সামনে পাচ্ছেন তার দিকেই তেড়ে আসছেন! পুলিশ, সাংবাদিক ও রাজনীতিক সবাইকে এ দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী করছেন। এই প্রতিবেদক তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বলেন, এখন লিখে হবে? এটি খুন। চলে যান এখান থেকে! তার পাশেই নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মা মানু রাণী (৬৫)। 

সুজন নামে স্থানীয় একজন জানান, এক সঙ্গে এক পরিবারের এত লাশ তারা আর কোনো দিন দেখেননি। 

এলাকার জনপ্রতিনিধি জানান, অদক্ষ চালকের অনিয়ন্ত্রিত ড্রাইভিং এর কারণে প্রতিদিনই মহাসড়কে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। 

চকরিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক-টিআইবি) সদস্য ও সঙ্গীত নিকেতনের অধ্যক্ষ সন্তোষ কুমার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা আজ মাথা মোড়ানো শেষে মহাসড়ক পার হয়ে বনের পাশে গিয়েছিলেন। সেখানে পূজা শেষে বাড়ি ফিরতে গিয়ে এমন মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সাইদুল ফরহাদ/আরআই