করোনার লোকসান কাটিয়ে ফুলের রঙে স্বপ্ন রাঙাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা। চলতি মাসেই রয়েছে প্রাণের উৎসব বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ ছাড়া রয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস। এসব উৎসবের কয়েক দিন আগে থেকেই ফুলের বাজারে দাম এখন চড়া।

প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস এলেই এ জেলার ফুলচাষি ও ফুলশ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। জাতীয় বিভিন্ন উৎসবে ব্যবহৃত হয় এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল।

গত ২০ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা বেজায় খুশি। এসব দিবসের বাড়তি চাহিদা মেটাতে জেলার ফুলচাষিরাও জমিতে পরিচর্যা করছেন নিয়মিত।

ঝিনাইদহ থেকে ফ্রেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ১৫ কোটি টাকার ওপরে ফুল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহ ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জমির উদ্দীন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, ফুলনগরী কালীগঞ্জে এবার ৭৫ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। পুরো জেলায় ৯০ হেক্টরের কাছাকাছি ফুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরের গান্না, কোটচাঁদপুর উপজেলার ইকড়া, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, মহেশপুর উপজেলার নেপা, শ্যামকুড় এলাকায় সব থেকে বেশি ফুলের আবাদ হয়ে থাকে।

জেলায় আবাদ করা মোট ফুলের মধ্যে গাঁদা ফুলই শতকরা ৭০ ভাগ। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠে চাষ করা হয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরাসহ নানা জাতের দৃষ্টিনন্দন ফুল।

আরও জানা যায়, ফুল চাষ সব সময় লাভজনক হলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ২০২০ সালে মার্চ মাস থেকে সব ধরনের উৎসব অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গেল দুই বছরে আর্থিকভাবে অনেক লোকসানে পড়েন চাষিরা। অনেকেই এ সময়ের মধ্যে অন্য চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

২০২১ সালের শেষের দিকে সংক্রমণ কমে আসায় সরকার থেকে অনেক অনুষ্ঠানাদির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ফলে আবারও ফুল চাষে ভাগ্য বদলাবেন, এমন স্বপ্ন বাসা বাঁধে চাষিদের মনে। তারা আবারও শুরু করেন মাঠে ফুলের চারা রোপণ। সেই ফুল ধীরে ধীরে বিক্রি শুরু হয়। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিক থেকে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ২০ তারিখের পর থেকে বাড়তে থাকে সব ধরনের ফুলের দাম।

কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মিরাজুল ইসলাম জানান, ১৭ শতাংশ জমিতে গাদা ফুলের চাষ করেছেন। শেষ পর্যন্ত ফুল ধরে রাখতে নিড়ানি, আগাছা নিধন, স্প্রে করা, কীটনাশক দেওয়া থেকে শুরু করে সবই করছেন নিজ হাতে। বর্তমানে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভেদে গাঁদা ফুলের ঝুপ্পা বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ঝুপ্পা।

কালীগঞ্জের ফুলচাষি রুবেল হোসেন জানান, গোলাপ বাগান করেছেন প্রায় দেড় বিঘা জমিতে। এ মাসের শুরু থেকেই ভালো দাম পেতে শুরু করেছেন তিনি। আশায় বুক বেঁধেছেন পেছনের সব লোকসান কাটিয়ে উঠবেন তিনটি দিবসে ফুল বিক্রির মাধ্যমে। শ্রমিকের সঙ্গে নিজেও ফুলের পরিচর্যায় তিনি এখন খুব ব্যস্ত।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ও ঝিনাইদহ ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জমির উদ্দীন বলেন, ঝিনাইদহ থেকে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ১৫ কোটি টাকার ওপরে ফুল বিক্রি হবে। এর মধ্যে ৭ কোটি টাকার গাঁদা ফুল বিক্রি হবে। উৎসবকে ঘিরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা অগ্রিম অর্ডার দিচ্ছেন। তাদের চাহিদা এত বেশি যে আমরা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছি। করোনার এই বিধিনিষেধ না থাকলে হয়তো ফুলের চাহিদা আরও বাড়ত। এখন ফুলের দাম অনেক বেশি। আমাদের লাভও অনেক বেশি হচ্ছে। 

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মো. মোহাইমেন আক্তার জানান, এই মুহূর্তে ফুলের মান ভালো রাখতে কৃষকদের নন-ইউরিয়া স্যার ও জৈব সার ব্যবহারে পরামর্শ দিচ্ছি। জৈব সারে ফুলের মান ভালো থাকে, স্থায়িত্ব বাড়ে। এতে ফুল সহজে পচে না।

তিনি আরও বলেন, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ফুলের মান ভালো রেখে পরিবহনের সুবিধার্থে কৃষি বিপণন অধিফতরের কাছে কয়েকটি কুলিং ভ্যান চেয়েছি। হয়তো দ্রুত পেয়ে যাব। তখন আর পরিবহনে সময় বেশি লাগলেও ফুল পচবে না। জেলার শীর্ষ কৃষি কর্মকর্তারাও জানান, এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।

এনএ