পটুয়াখালীর বাউফলে একই পরিবারের ৫৭ জন পবিত্র কোরআন শরিফের হাফেজ হয়েছেন। এই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইতিমধ্যে জেলায় সুনাম কুড়িয়েছেন সদর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রাম এলাকার বাসিন্দা একাত্তরোর্ধ্ব শাহজাহান হাওলাদার।

৫৭ জন পবিত্র কোরআন শরিফের হাফেজ হলেন হাফেজ মাওলানা মজিবুর রহমান, হাফেজ মাওলানা নূর হোসেন, হাফেজ মাওলানা আবু বকর, হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ হাসান, হাফেজ মাওলানা মো. সোলাইমান, হাফেজ মাওলানা এমদাদুল্লাহ্, হাফেজ মাওলানা তালহা, হাফেজ ইব্রাহীম, হাফেজ মো. জোবায়ের, হাফেজ মাওলানা সালাহ্ উদ্দিন, হাফেজ মাওলানা সালমান, হাফেজ মাওলানা জোনায়েদ, হাফেজ মাওলানা সফিক, হাফেজ মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, হাফেজ মাওলানা সাইফুল্লাহ্, হাফেজ মাওলানা আবদুল্লাহ্, হাফেজ মাওলানা লোকমান, হাফেজ মাওলানা রাইহান, হাফেজ মাওলানা ইমরান, হাফেজ মোহাম্মদ, হাফেজ মাওলানা ইলিয়াস, হাফেজ আহমদ, হাফেজ মাওলানা নোমান, হাফেজ মাওলানা রেদওয়ান, হাফেজ মাওলানা রোহান, হাফেজ মাওলানা সানাউল্লাহ্, হাফেজ মাওলানা সাকাওয়াতুল্লাহ্, হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ্, হাফেজ আবদুল আলীম, হাফেজ মাওলানা জোবায়ের, হাফেজ মাওলানা আবদুল্লাহ্।

হাফেজা মাওলানা মানসুরা, হাফেজা মাওলানা ফারহা, হাফেজা মাওলানা মারওয়া, হাফেজা মাওলানা ফাতেমা, হাফেজা মাওলানা রাহিমা, হাফেজা বুশরা, হাফেজা ইসরা, হাফেজা মোসা. খাদিজা, হাফেজা মোহাইমিনা, হাফেজা মুসফিকা, হাফেজা মোবাশ্বেরা, হাফেজা সামসুন্নাহার, হাফেজা নাসিমা, হাফেজা সুমাইয়া, হাফেজা মারজান, হাফেজা আফনান, হাফেজা রাউয়ান, হাফেজা খানসা, হাফেজা মনিরা, হাফেজা উম্মেহানী, হাফেজা নাসরিন, হাফেজা নাদিফা, হাফেজা আম্মারা, হাফেজা আয়শা, হাফেজা সামাইয়া মনি, হাফেজা আবু হোরায়রা, হাফেজ হুজাইফা।

সরেজমিন দেখা যায়, জামিয়া ইসলামীয়া আমেনা খাতুন মহিলা মাদ্রাসায় শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে হাফেজ জোবায়ের শিক্ষার্থীদের কোরআন পড়াচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত করছে।

জামিয়া ইসলামীয়া আমেনা খাতুন মহিলা মাদ্রাসা

জানা গেছে, বাউফল সদর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রাম এলাকার বাসিন্দা হাজি আকরাম আলী হাওলাদার পেশায় পণ্ডিত ছিলেন। হাজি আকরাম আলী হাওলাদারের ছেলে নুর মোহাম্মদ হাওলাদার, তিনিও পেশায় পণ্ডিত ছিলেন। নুর মোহাম্মদ হাওলাদারের ছেলে হাজি শাহজাহান হাওলাদার।

বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের বোলতলী গ্রাম এলাকার বাসিন্দা কাঞ্চন মুন্সি সিকদারের মেয়ে মাঞ্জুরা বেগমে সঙ্গে পরিবারিকভাবে শাহ্জাহান হাওলাদারের বিয়ে হয়। শাহ্জাহান ও মাঞ্জুরা দম্পতির ঘর আলো করে একে একে ছয় ছেলে ও চার মেয়ে জন্ম নেন।

শাহজাহান হাওলাদার বাউফল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। অথচ তিনি নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন হাফেজিয়া মাদ্রাসা। পবিত্র কোরআনের হাফেজ বানিয়েছেন নিজের ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের অন্যদেরও। তাদের বিয়েও দিয়েছেন হাফেজদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে পরিবারের এখন ৫৭ জন কোরআন শরিফের হাফেজ। বাড়ির ছোটরাও একই পথে হাঁটছেন।

ঢাকা পোস্টকে শাহজাহান হাওলাদার মুঠোফোনে জানান, তার বাবা (নুর মোহাম্মদ) ছিলেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তিনি হজ পালন করতে সৌদি আরবে যান। সেখানে হজ পালনরত অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। তার বাবা হাফেজদের খুব ভালোবাসতেন। এ কারণেই লক্ষ্য স্থির করেছেন, পরিবারের সবাইকে হাফেজি পড়াবেন। সেই সূত্র ধরে আত্মীয়তাও করেছেন হাফেজদের সঙ্গে। পরে ছেলে-মেয়েদের বিয়েও দিয়েছেন হাফেজদের সঙ্গে। এরপর তার ইচ্ছা অনুযায়ী, তার ছেলে-মেয়েরাও তাদের সন্তানদের হাফেজি পড়িয়েছেন ও পড়াচ্ছেন।

৪৫ বছর আগে স্ত্রীর ১৩ ভরী স্বর্ণ ও ১৩ কেজি রুপা মাদ্রাসায় দান করা হয়। তা দিয়েই আমাদের বাড়ির সামনে প্রথম মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়। এখনো নিজের খরচে মাদ্রাসা পরিচালনা করছি। সরকারি কোনো সহায়তাও পাইনি।

শাহজাহান হাওলাদার

তিনি জানান, ছেলেদের মাদ্রাসা পরিচালনা করেন তার ছেলেরা এবং মেয়েদের মাদ্রাসা পরিচালনা করেন তার মেয়ে ও ছেলের বউয়েরা। আমার যা ছিল, তার সবকিছু মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনায় খরচ করি। তারপরও মাদ্রাসার সব খরচ পোষাতে পারি না। এ জন্য সরকার যদি এতিম ছেলে-মেয়েদের জন্য সহায়তা করত, তাহলে ভালো হতো, বলেন তিনি।

শাহজাহানের পঞ্চম ছেলে হাফেজ জোবায়ের বলেন, আমিসহ আমার বাবার ছয় ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে ও তার আট ছেলে-মেয়ে এবং এক মেয়ে জামাতা সৌদি আরব থাকেন। বাকি সবাই ব্যবসার পাশাপাশি হাফেজি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা ও মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। ঢাকা, বরিশাল, বাউফলসহ ২৫টি মাদ্রাসা স্থাপন করেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে অনেকে ৮০টি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

স্থানীয় মেহেন্দী প্লাস আশরাফুল কওমি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ মাওলানা মাইনুল ইসলাম বলেন, সমাজে একই পরিবারের ৫৭ জন কোরআন শরিফের হাফেজ হওয়ায় শাহজাহান হাওলাদার জেলায় সুনাম কুড়িয়েছেন। এটা বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

শাহজাহান হাওলাদারের চাচাতো ভাই ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, চাচাতো ভাইয়ের পরিবারের সব সদস্য আল্লাহর দিনের কাজ শিক্ষা গ্রহণ করেছে, এটা আমাদের জন্য গৌরবের।

এনএ