নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির আনন্দ মিছিলে পদবঞ্চিতদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সামনে এ ঘটনা ঘটে। 

এ সময় গুরুতর আহত দাউদপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আসাদ ফকিরকে প্রথমে ভুলতা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল মামুন।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নয়ন সরকার, কামরুল হাসান, সদস্য ইসহাক, জোবায়ের মোল্লা, উপজেলা ছাত্রদল নেতা পাবেল মোল্লা, মেহেদীসহ ১২ জন। আহতরা বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। 

এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি নাহিদ হাসানকে আহ্বায়ক ও মাসুম বিল্লাহকে সদস্য সচিব করে কমিটি অনুমোদন করেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীব। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইউনিয়নে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে পদবঞ্চিতরা। এর মধ্যে কাফনের কাপড় পরে উপজেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। সেখান থেকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের কুশপুতুল দাহ করা হয়। 

জানা যায়, নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ হাসান ও মাসুম বিল্লাহর নির্দেশে প্রথমে রূপগঞ্জ ইউনিয়নে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল হওয়ার কথা ছিল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, তাদের প্রতিহত করতে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতা সুলতান মাহমুদ ও মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নেয়। পরে স্থান পরিবর্তন করে দাউদপুর ইউনিয়নে আনন্দ মিছিল করার প্রস্তুতি নেয় কমিটির নেতাকর্মীরা। এতে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের অংশগ্রহণের কথা থাকলেও তারা আসেননি বলে জানা যায়। 

এদিকে দাউদপুরে মিছিল বের করার সময় পদবঞ্চিতদের তিনটি মোটরসাইকেলে ৯ জন এ পথে যাচ্ছিলেন। মিছিল করতে দেখে প্রায় শতাধিক ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মিছিলে তারা ধাওয়া দেয়। প্রথমে ধাওয়ায় সবাই দৌড় দিলেও যুগ্ম আহ্বায়ক নয়ন সরকার, কামরুল হাসান, সদস্য ইসহাক, জোবায়ের মোল্লা, পাবেল মোল্লাসহ একটি গ্রুপ তাদের রুখে দাঁড়ায়।

এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে দুই পক্ষের আরও নেতাকর্মী এসে যুক্ত হন। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলে এ সংঘর্ষ। পরে র‍্যাবের একটি টহল গাড়ি ঘটনাস্থলে আসলে উভয়পক্ষই চলে যায়।

হামলার ব্যাপারে জানতে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতা ও রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের স্থগিত কমিটির আহ্বায়ক সুলতান মাহমুদ জানান, আমরা এই আওয়ামী লীগঘেঁষা, সন্ত্রাসী, প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া, ডাকাত ও নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে করা কমিটি মানি না। কমিটিতে রাজপথের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীব টাকা খেয়ে এই কমিটি করেছে। তাদের আমরা উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। এ কমিটি বাতিল করতে হবে অবিলম্বে। 

হামলার শিকার নয়ন সরকার জানান, পদবঞ্চিতরা অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আমাদের বেদম মারধর করেছে। আমাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে। হামলায় আমাদের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। আমি নিজে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। তাদের কেউ হামলায় আহত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তারা নির্মমভাবে প্রহার করেছে আমাদের নেতাকর্মীদের। সেখানে সিনিয়র কয়েকজন থাকায় তাদের সম্মানে আমরা কারও ওপর হামলা করিনি।

রাজু আহমেদ/এসপি