ম্লান হচ্ছে ধারাবাহিক ভালো ফল ও বৃত্তি পাওয়া রুমার স্বপ্ন
পরিবারের তিন বেলা খাবার জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে জটিল রোগে আক্রান্ত রুমার রিকশাচালক বাবা নাসির উদ্দিনের। সেই রুমা পিইসি, এসএসসির পর এবার এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়েছেন। কিন্তু তার নার্স হওয়ার স্বপ্ন এখন ম্লান হতে যাচ্ছে। কারণ অভাব-অনটনের সংসারে কত দূর পাড়ি দেবেন, সে চিন্তায় তিনি ও তার পরিবার।
হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী রুমা আক্তার বরগুনার সদর ইউনিয়নের বাশঁবুনিয়া গ্রামের দরিদ্র নাসির উদ্দিনের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রুমা সবার ছোট।
বিজ্ঞাপন
রুমার পরিবারসূত্রে জানা যায়, অর্থাভাবে কারোনাকালীন রুমার লেখাপড়া বন্ধ করতে বলে তার পরিবার। কিন্তু রুমা টিউশন করিয়ে কোনোভাবে চালিয়ে যান তার খেলাপড়া। কখনো আধপেট ও কখনো না খেয়েই রাত কাটিয়ে দিয়েছেন। এমন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর পিএসসি, এসএসসির পর এবার এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ অর্জন করেন রুমা। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫-এর পাশাপাশি বৃত্তিও পেয়েছেন তিনি।
অভাবের কষ্ট, অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত আসতে পারলেও এখন অর্থাভাবের কারণে নার্স হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে হতদরিদ্র পরিবারের এই মেধাবী শিক্ষার্থী রুমার।
বিজ্ঞাপন
রুমার বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, অভাবের সংসার আমার। তাই ছোটবেলা থেকেই রুমার বায়নাগুলো পূরণ করতে পারিনি। করোনায় যখন আমার কাজকর্ম বন্ধ ছিল, তখন ও প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের লেখাপড়া চালিয়েছে। আমার মেয়ে নার্স হয়ে সবার সেবা করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভালো রেজাল্ট থাকা সত্ত্বেও টাকার অভাবে মেয়েকে নার্সিংয়ে ভর্তি করাতে পারছি না।
রুমার মা হাসিনা বেগম বলেন, রুমার কখনো কোনো চাহিদা ছিলে না। এক জামা কাপড় দিয়ে কয়েক বছর কাটিয়ে দিত। তবুও ও কোনো বড় ধরনের আবদার করেনি কখনো। আমার মেয়ে এত ভালো রেজাল্ট করল, কিন্তু ওর নার্স হওয়ার স্বপ্ন এখন পর্যন্ত অধরাই রয়ে গেল। আমার মেয়ে যাতে নার্স হতে পারে, সে জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।
বাঁশবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, রুমা আমার ছাত্রী ছিল। ও খুব মেধাবী এবং ট্যালেন্টেড, তা ওর রেজাল্টের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে ওর স্বপ্নটা পূরণ হতো।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, পিইসি থেকে রুমা তার জিপিএ-৫-এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। তার স্বপ্নপূরণে সব ধরনের সহায়তা করবে বরগুনা জেলা প্রশাসন।
এনএ